• অপরাধ ও দুর্নীতি

প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা নিয়ে উধাও কুবি সংলগ্ন চা-সিগারেট দোকানী

  • অপরাধ ও দুর্নীতি
  • ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২২ ২২:৪১:৪০

ছবিঃ সিএনআই

কুবি প্রতিনিধিঃ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) ক্যাম্পাস সংলগ্ন দক্ষিণ মোড়ে এক চা-সিগারেটের দোকানী কুবি শিক্ষার্থী-কর্মচারীসহ স্থানীয় বিভিন্ন মানুষের প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত দোকানীর নাম সাইফুল। তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দক্ষিণ মোড়েই বাচ্চু মিয়ার বিল্ডিংয়ের ৩ তলায় ভাড়া থাকতেন।

বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তিনি কয়েকবছর ধরে মানুষের কাছ থেকে সিগারেটের ব্যবসার শেয়ার, ধার ও সুদের চুক্তিতে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা নিয়েছেন। গত কয়েকদিন ধরে তিনি কিছু পাওনাদারদের জানিয়েছেন ১৫ ফেব্রুয়ারী তাদেরকে টাকা ফেরত দিয়ে দিবেন। কিন্তু ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে সাইফুল দোকান না খোলায় পাওনাদাররা তাকে ও তার স্ত্রী সুমি আক্তারের ফোনে কল দিলে নাম্বার বন্ধ পায়। 

এরপর পাশেই ভাড়া বাসায় খোঁজেন জ নিলে তাদের পাওয়া যায়নি। কেউ কেউ বলছেন স্ত্রীর বোনের বাসায় বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে ঘরে দামি দামি আসবাবপত্র সব নিয়ে পালিয়ে গেছেন।

ভুক্তভোগীদের দেয়া তথ্য মতে জানা যায়, অভিযুক্ত সাইফুলের বাড়ি চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার রহিমানগর ডাগঘরের পালগিরি গ্রামে।তার পিতার নাম বজলুর রহমান। 

সাইফুলের ব্যাপারে জানতে চেয়ে সাইফুলের ছবি দেখালে গোহাট উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবির হোসেন বলেন, এই সাইফুলের বাড়ি আমার বাড়ির কাছাকাছি। গত ৪ বছর আগে এলাকা থেকে ৭-৮ লক্ষ টাকা নিয়ে স্ত্রীসহ পালিয়ে আত্মগোপনে ছিল সে। এরপর এলাকাবাসীর সিদ্ধান্তে তাদের জমি বিক্রি করে মানুষের টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। তার বাবার নাম আব্দুল মান্নান। আর ভাইয়ের নাম সবুজ।

অভিযুক্ত সাইফুল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১১ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মারুফের কাছ থেকে সাড়ে ১০ লক্ষ, ম্যাজিক প্যারাডাইজের পাশের কনফেকশনারির দোকানী মো. ইব্রাহিম, রিপন হোসাইন ও স্থানীয় বাসিন্দা ছাত্তারের কাছ থেকে ৯ লক্ষ টাকা করে নিয়েছে। কোটবাড়িতে গাজী স্টোরের মালিক সাইফুল ইসলামের কাছ থেকে সিগারেট বাবট অগ্রিম ৩ লক্ষ টাকা ও কুবির নজরুল হলের বাবুর্চি আবু ইউসুফের কাছ থেকে ১ লক্ষ টাকা নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এভাবে আরো অনেক মানুষের কাছ থেকে সে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়েছে বলে ইভিযোগ উঠে।

সাইফুলের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা জানাজানি হলে চারপাশে চাঞ্চল্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এরপর পাওনাদাররা তার ভাড়া বাসা ও ভাড়া দোকানের তালা ভেঙ্গে ভিতরে গেলে সেখানে মূল্যবান তেমন কিছু পায়নি।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত সাইফুল, তার স্ত্রী সুমি এবং তার ছোট ভাই সবুজের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের জন্য ফোন দেয়া হলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

সাইফুল যে বাসায় থাকতেন সেই বাসার মালিক সোহাগ বলেন, সাইফুল দুইদিন আগে দুইটা টিভি বাকি নিয়েছিল আমার দোকান থেকে। এছাড়াও তার কাছে বাসা ভাড়া বাকি প্রায় ৪৫ হাজার টাকা। সে মূল্যবান যা যা আছে সব নিয়ে গেছে। এখন তাকে এবং তার স্ত্রীকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মারুফ বলেন, তার দোকানে সবসময় চা খেতাম, আড্ডা দিতাম। একটা ভাল সম্পর্ক হয়েছিল। উনি আমার সাথে বিজনেসের কথা বললে প্রথমে আমি রাজি হইনি। তবে করোনার লক ডাউনে ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশার কারনে বাসায় বসে বিজনেসে জড়াতে আগ্রহী হই। আব্বুকে জানিয়ে ৫০ হাজার টাকা ইনভেস্ট করলাম। সে মাসে আমাকে ৫ হাজার টাকা লাভ দিচ্ছিলো। আস্তে আস্তে তার প্রতি আমার বিশ্বাস গাঢ় হচ্ছিলো। এরপর বাসায় সবাইকে বুঝিয়ে টাকা আনি, আর ধাপে ধাপে সাড়ে ৭ লক্ষ টাকা দেই। সবশেষে এ মাসে ৩ লাখ টাকা সহ মোট সাড়ে ১০ লক্ষ টাকা ইনভেস্ট করেছি। সে আমাকে জানিয়েছিলো এ ব্যবসাটা শুধু সে আর আমিই করছি। আর কেউ না, কিন্তু এখন দেখছি আমার মতো অনেককে সে প্রতারণার ফাদে ফেলেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, অভিযুক্ত দোকানী আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের কেউ না। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের কেউ হলে টাকা আদায়ে আমরা ভূমিকা রাখতে পারতাম। তবে, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী যদি আমাদের সাথে যোগাযোগ করে তাহলে আমরা তাকে সহযোগিতা করতে পুলিশ প্রশাসনকে জানাব যেন তার টাকা উদ্ধারে সচেষ্ট হয়।

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, গতকাল এ বিষয়ে আমাদের কাছে একটা অভিযোগ দেয়া হয়েছে। আমরা ঘটনার সত্যতা যাচাই করে ব্যবস্থা নিব।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo