• বিশেষ প্রতিবেদন

একুশে ফেব্রুয়ারি ও ভালবাসা দিবসকে সামনে রেখে ফরিদপুরে প্রায় কোটি টাকার ফুল বিক্রির সম্ভাবনা 

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২২ ১৩:৩৬:৫৮

ছবিঃ সিএনআই

ফরিদপুর প্রতিনিধিঃ একুশে ফেব্রুয়ারি ও ভালবাসা দিবসকে ঘিরে ব্যস্ততা বেড়েছে ফরিদপুরের ফুলচাষিদের। চাষিদের অভিমত, এবার বিধিনিষেধ না থাকলে ফুলের ভালো দাম পাবেন তারা। কারণ গত দু’বছর কেটেছে লোকসানে। করোনা ও ঘূর্ণিঝড়ে ফুলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে তাদের। এখানকার ফুলচাষিদের টার্গেট এখন ফেব্রুয়ারি মাসকে ঘিরে। কারণ এ মাসে ফুলের চাহিদা অনেক বেশি। একদিকে ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, অন্যদিকে মহান একুশে ফেব্রুয়ারি।  

জানা গেছে, দিন যত যাচ্ছে বৃদ্ধি পাচ্ছে ফুলচাষ। ফুলচাষে তরুণ উদ্যোক্তাদের আগ্রহ বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নানান ফসলের জেলা ফরিদপুরে ফুলচাষ একেবারেই নতুন। চাষাবাদ কম। একসময় ফরিদপুরের মানুষ যশোরের ফুলের দিকে তাকিয়ে থাকত। এখন জেলার তরুণ উদ্যোক্তাদের ফুল দিয়েই স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হচ্ছে।   

সরেজমিনে দেখা যায়, ফরিদপুরের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা বাগানে শোভা পাচ্ছে বাহারি রঙের নানান ধরনের ফুল। তারমধ্যে রয়েছে বিভিন্ন জাতের-রঙের গোলাপ, হরেক রকম জারবেরা, চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জিপসি, রজনীগন্ধাসহ নানা জাতের ফুল। ফুলের বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত চাষিরা। কেউ ফুলের গাছে পানি দিচ্ছে, কেউ গাছের গোড়ায় সার ছিটাচ্ছে।

বাজারে বর্তমানে ১টি গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩৫ টাকা, জারবেরা ১৫ থেকে ২০ টাকা, রজনীগন্ধা ১০ টাকা, চন্দ্রমল্লিকা ৫ টাকা, গ্লাডিওলাস ১২ থেকে ১৫ টাকায়।

ফরিদপুর সদরের গধাধর ডাঙ্গী গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা  মো. লিয়াকত হোসেন এখন ফুল চাষে সফল উদ্যোক্তা। আলীয়াবাদ ইউনিয়নের খুশির বাজার এলাকায় ২০১৮ সালের শেষের দিকে মাত্র ৫২ শতাংশ জমিতে বড় ভাই আনোয়ার হোসেনের সহযোগিতায় জারবেরা ফুলের চাষ শুরু করেন লিয়াকত। ২০১৯ সালে ব্যবসা ভালো হওয়ায় আরও ৭৫ শতাংশ জমি নিয়ে এখন মোট ১২৭ শতাংশ জমিতে ফুল চাষ করছেন সাবেক ছাত্র নেতা লিয়াকত হোসেন। 

তিনি জানান, মহামারি করোনার কারণে গত দুই বছরে প্রায় অর্ধকোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বাগানের উৎপাদিত ফুল বাগানেই নষ্ট হয়েছে। আয় ছিল না, কিন্তু ফুলগাছ পরিচর্যা করে সার-ওষুধ দিতে হয়েছে। ফুলের চাহিদা ধিরে ধিরে বাড়ছে। এভাবে এবার ফুল বিক্রি করতে পারলে করোনার ক্ষতি মোটামুটি কাটিয়ে উঠতে পারবো। আশা করছি এবার ৫০- ৬০ লক্ষ টাকা লাভ হবে।

চাষিরা বলেন, এবার বিধিনিষেধ না থাকলে ফুলের ভালো দাম পাবেন। পেছনের ক্ষতি কিছুটা হলেও কাটিয়ে লাভের মুখ দেখবেন। নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।

ফরিদপুর শহরের নিউ মার্কেট এলাকার ফুল ব্যবসায়ী সুজন মোল্লা জানান, এবার ফুলের ভাল দাম আছে। বিধি নিষেধ না থাকলে চাষী ও বিক্রেতারা সবাই লাভবান হব। ফরিদপুর অঞ্চলে আগে যশোর থেকেই ফুল আসতো। ফরিদপুরে উৎপাদিত ফুল থেকেই চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। 

অম্বিকাপুর ইউনিয়নের ভাষানচর এলাকার চাষী নজরুল ইসলাম বলেন, আমার করোনায় ফুল চাষ করে ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়েছে। এবার আর ফুল চাষ করিনি।

শহরের গঙ্গাবর্দী এলাকার জারবেড়রা ফুল চাষী জাহাঙ্গীর কবির জানান, করোনার ক্ষতি পোষাতে না পেরে ফুল চাষ বন্ধ করেছিলাম। এবার বাজার ভাল বিধায় আবারও ৪৫ শতাংশ জমিতে জারবেরা ও গ্লাডিওলাস ফুল চাষ করেছি। লোন করে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা দিয়ে চাষ করেছি ফুল। আশা করছি এবার ক্ষতি কিছুটা উঠবে।

এ ব্যাপারে ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. হজরত আলী জানান, ফুলচাষ লাভজনক হওয়ায় ফরিদপুরে দিন দিন বাড়ছে। যদিও করোনার কারণে ফুলের বাজার সংকুচিত হয়ে পড়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফুলচাষিরা। ফুলচাষে সরকারিভাবে কোনো প্রণোদনার ব্যবস্থা নেই। তবে আমাদের পক্ষ থেকে চাষিদের পরামর্শ প্রদান করা হয়। তিনি আরো বলেন, এবার ফেব্রুয়ারী মাসকে সামনে রেখে প্রায় কোটি টাকার ফুল বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। 

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo