• বিশেষ প্রতিবেদন

বিশ্ব এবং বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলো উইঘুরদের যেন ভুলে না যায়

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ০৮ জানুয়ারী, ২০২২ ১৫:৩৯:১৪

ছবিঃ সংগৃহীত

মাউরিজিও গেরিঃ চীনের উইঘুর মুসলিম জনসংখ্যার শিকড় গভীর এবং জিনজিয়াংয়ে তার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, চীনা কর্তৃপক্ষের দ্বারা জোরপূর্বক শ্রম সহ ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের মাত্রা বেড়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একতরফাভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা এবং আমদানি বাজেয়াপ্ত করা সত্ত্বেও, চীন অবিচলিতভাবে ঘোষণা করেছে যে তাদের পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক আইনের পরিধির মধ্যে রয়েছে। চীন উদ্বিগ্ন যে এই অঞ্চলটি সম্ভাব্য সন্ত্রাসীদের দ্বারা পরিপূর্ণ।

বিশ্বের একটি ক্রমবর্ধমান শক্তি হিসাবে চীনকে যুক্ত করতে হবে এবং এটা জেনে যে বেইজিং পশ্চিমাদের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে পছন্দ করে না -হোক তা 'সন্ত্রাসবাদীদের' সাথে মোকাবিলা করা অথবা নাগরিকদের জন্য সমান ন্যায়বিচার এবং মানবাধিকার নিশ্চিত করা। উইঘুরদের নিয়ে উদ্বিগ্ন দেশগুলো, বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোকে চীনের প্রতি আরও সূক্ষ্ম ও কার্যকরী পন্থা অবলম্বন করতে হবে। চীনের সাথে সম্পৃক্ততা অবশ্যই বিশ্বাস এবং পারস্পরিক সৌহার্দ্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে করতে হবে, কারণ শুধুমাত্র এই ধরনের সম্পর্কের মাধ্যমেই বেইজিংয়ের সাথে উইঘুরদের সম্পর্কে আলোচনার উথাপন করা সম্ভব। 

প্রকৃতপক্ষে, চীনের কমিউনিস্ট শাসকরা কয়েক দশক ধরেই সেই অঞ্চলের  অধিকার এবং স্বাধীনতাকে ধীরে ধীরে কিন্তু ক্রমাগত হারে রোধ করে আসছে। সেই সময়ে, এই কাজগুলিকে জোরপূর্বক আত্তীকরণ এবং জাতিহত্যা বা "সাংস্কৃতিক গণহত্যা" হিসাবে পশ্চিমের ভাষ্যকারদের দ্বারা বর্ণনা করা হয়েছিল।

জিনজিয়াং-এর সমস্যাগুলি মূলত, ঐতিহাসিক আর্থ-সামাজিক বৈষম্যের সাথে সম্পর্কিত। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে চীনের যে অসাধারণ বৃদ্ধি এবং সাফল্য হয়েছে তার বেশিরভাগই প্রভাবশালী জাতি হান চীনারা উপভোগ করছে। অন্যদিকে জিনজিয়াংয়ে উইঘুরদের শিক্ষা এবং চাকরির সুযোগ কম এবং তাদের খুব স্বল্প বেতনের চাকরি করতে হয়। মানসম্মত শিক্ষার অভাবের ফলে উচ্চ প্রযুক্তি খাতে বা উচ্চ উপার্জনকারী চাকরিতে হান স্বদেশীদের তুলনায় খুব কম উইঘুর রয়েছে।

ভাষা ও ধর্মীয় অনুশীলন সহ উইঘুরদের পরিচয়ের মূল উপাদানগুলির উপর চীনা রাষ্ট্রের বাঁধা এবং কঠোর ব্যবস্থা , উইঘুরদের ক্ষোভ উস্কে দিয়েছে। চীনা রাষ্ট্র একটি জটিল গণ কারাবাস এবং কঠোর নজরদারি ব্যবস্থা চালু করেছে এবং জাতিসংঘ জানিয়েছে যে ২০১৮ সাল থেকে এক মিলিয়নেরও বেশি উইঘুরকে বন্দী শিবিরে রাখা হয়েছে। প্রমাণ পাওয়া যায় যে অনেককে তাদের বাড়ি থেকে অনেক দূরে শ্রম শিবিরে থাকতে বাধ্য করা হয়েছে। এমনকি নারীদের ধর্ষণ করা বা জোর করে বন্ধ্যাকরণ করার কথাও কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

সম্প্রতি ৪৩ টি দেশ, বিষেশকরে পশ্চিমা দেশগুলি, জাতিসংঘের একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে এই পরিস্থিতির নিন্দা করেছে। তবে সমস্যা হল যে একই সময়ে ৬২ টি অন্যান্য দেশ বলেছে যে সমস্যাটি চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয় যার ফলে ফলে অন্যদের অভিযোগগুলি "রাজনৈতিক বিষয়" এবং "বিভ্রান্তিকর" বলে খারিজ হয়ে যায়। 

পাকিস্তান, মিশর, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং তুরস্কের মতো দেশগুলো চীন থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ ও ঋণ পেয়েছে।
 
শুধু মুসলিম দেশগুলোই নয়, সমগ্র বিশ্বের চীনকে যুক্ত করতে হবে এবং জাতিগত গোষ্ঠীগুলোকে একীভূত করার বিষয়ে দেশগুলোর নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা চীনকে প্রদান করতে হবে।

অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) নেতৃস্থানীয় সদস্য হিসেবে বাংলাদেশকেও চেষ্টা করতে হবে যাতে সংস্থাটি বিশ্বজুড়ে মুসলিম সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষার দায়িত্বের অংশ হিসেবে চীনের মুসলিমদের পরিস্থিতির উপর নজরদারির দায়িত্ব পালন করে।

বাংলাদেশের উচিত ওআইসি এবং এর সদস্য দেশগুলিকে অন্ততপক্ষে সর্বোত্তম অনুশীলন এবং সম্ভাব্য কৌশলগুলি সম্পর্কে উৎসাহিত করা যা আন্তঃসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং বোঝাপড়াকে উন্নত করতে ভূমিকা পালন করবে। 

এখন উচিৎ উইঘুরদের বিষয়ে অন্যান্য জাতির কণ্ঠস্বরকে আরও উন্নীত করা এবং এই বিষয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার সাথে সাথে তাদের সমর্থন করা যেন সর্বত্র এই বিষয়টি স্পষ্ট হয় যে জিনজিয়াং-এর সংখ্যালঘুদের প্রতি যে অবিচার হচ্ছে তা শুধুমাত্র পশ্চিমেরই নয় বরং সারা বিশ্বের সকল মুসলিম এবং জাতির জন্য উদ্বেগের বিষয়।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo