• বিশেষ প্রতিবেদন
  • লিড নিউজ

একটি আমের দাম ১৬৮০ টাকা, লেবু ৬৫০ টাকা!

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • লিড নিউজ
  • ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ১০:৫২:২৫

ছবিঃ সিএনআই

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ রাস্তার মোড়ের পাশে খোলা ফলের দোকান। সাজিয়ে রাখা আছে বিভিন্ন ফল। রয়েছে লাল-হলুদ বর্ণের আম। একেকটি আমের ওজন ৮০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ১০০ গ্রাম পর্যন্ত। সাজিয়ে আমের মধ্যে উপর থেকে একটি আম নিয়ে মাপা হলে ওজন হলো ১ কেজি ৫০ গ্রাম। ১৬০০ টাকা কেজি হিসেবে এই একটি আমটি নিতে হলে ক্রেতাকে গুনতে হবে ১৬৮০ টাকা। অস্ট্রেলিয়ান সূর্যডিম আমের পসরা নিয়ে আমের রাজধানীখ্যাত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিশ্বরোড মোড়ে বসে আছেন বিক্রেতা হযরত আলী। 

বিশ্বরোড মোড়ে এই ফলের দোকানে পেয়ারা ও তরমুজ ছাড়া বাকি সবগুলো ফলই বিদেশি। অস্ট্রেলিয়ান সূর্য ডিম আম ছাড়াও এখানে আরো রয়েছে থাইল্যান্ডের জাম্বু ফলজি বা থাইকিউ জাই আম, চায়না হানি পামেলো লেবু (বাতাবি লেবু), রাম্বুটান নামক মালয়েশিয়ান লিচু, মিশরের কাঁচা খেজুর, থাইল্যান্ডের সুমিষ্ট আতা। 

বুধবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে বিশ্বরোড মোড়ের এই ফলের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, হযরত আলীর ছেলে জেলা শহরের ফুলকুঁড়ি ইসলামিক একাডেমির সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র আবদুল আলিম শ্রাবণ (১৪) দোকানে বসে আছে। সে জানায়, তার বাবা বাসা খেতে গেছেন। ফল বিক্রেতা হযরত আলীর বাড়ি জেলা শহরের বেলপুকুরে। তিনি দীর্ঘ ৭ বছর ধরে ফলের ব্যবসা করেন। 

কথা হয় শ্রাবণের সাথে। সে জানান, অনেক দামি লাল ও হলুদ বর্ণের সূর্যডিম আমগুলো অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা হয়েছে। প্রথম চালানে ৮ পিস নেয়া হয়েছে। যার একটি ইতোমধ্যে বিক্রি হয়েছে। ১৬০০ টাকা কেজি দরে আমগুলো বিক্রি হচ্ছে। ৩ দিন আগে ঢাকা থেকে এগুলো নিয়ে আসা হয়েছে। সূর্যডিম আমের স্বাদ খুবই মিস্টি। বাকি আমগুলো একজন অর্ডার করেছেন৷ 

দেশীয় বাতাবি লেবুর মতো ফল রয়েছে এই দোকানে। এফল নিয়ে জানতে চাইলে শ্রাবণ আরও জানায়, এটির নাম চায়না হানি পামেলো লেবু। এর দাম ৪৫০ টাকা কেজি। তবে পিস হিসেবে নিলে ক্রেতাদের গুনতে হবে ৬৫০ টাকা। এই লেবুর ওজন একেকটা দেড় কেজি করে। দেশীয় বাতাবি লেবুতে কাটার পর মরিচ, লবন দিয়ে মাখার পর খেতে হয়। তবে চায়না হানি পামেলো লেবুর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এতে কোন মরিচ, লবন লাগবে না। সরাসরি খেলে প্রাকৃতিকভাবেই মরিচ লবনের সেই স্বাদ পাওয়া যাবে। এমনকি এই লেবুতে দেশীয় লেবুর মতো টক নেই। 

ফলের দোকানে আধা ঘণ্টা অবস্থান করে দেখা যায়, অন্তত ১৫-২০ জন ক্রেতা আসলো দোকানে। ফলের নাম ও দাম জিজ্ঞেস করেই তারা ফিরে যাচ্ছে। কথা হয় এক পুলিশ কর্মকর্তার সাথে। তিনি বলেন, ফলগুলো দেখতে খুব লোভনীয় কিন্তু দাম শোনার পর তা আর কেনার ইচ্ছা থাকে না। বাইরের দেশ থেকে আনা বলে ফলগুলোর অনেক দাম বলছে।  

স্কুল শিক্ষক মোতাহার আলী জানান, আমের জেলা হিসেবে পরিচিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ। অথচ এই চাঁপাইনবাবগঞ্জেই আম বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ টাকা কেজি, এটা ভাবনারও বাইরে। লোভনীয়, আকর্ষণীয় ও সুস্বাদু হলেও ফলগুলো শুধুমাত্র উচ্চবিত্ত পরিবারের লোকজনের জন্য। কারন একটাই, সবগুলোরই দাম আকাশচুম্বী। তাই ফলগুলোর নাম এবং দাম দেখেই ফিরে যেতে হচ্ছে।

এরই মাঝে দোকানে আসে মালিক হযরত আলী। তিনি জানান, সূর্যডিম আম ছাড়াও তার কাছে আরেকটি জাতের আম রয়েছে। থাইল্যান্ডের জাম্বু ফলজি বা থাইকিউ জাই আম। এর দাম কেজিপ্রতি ১০০০-১২০০ টাকা। ৪-৫ দিন আগে একই জায়গা থেকে ১০-১৫ কেজি নিয়ে এসেছিলাম। ৪-৫ দিন নিয়ে এসেছি। 

তিনি আরও জানান, রাম্বুটান নামক মালয়েশিয়ান লিচুর দাম কেজিপ্রতি ১৬০০ টাকা। ফলটি অনেক বিক্রি হয়েছে। দেশী লিচুর থেকে এটি অনেক মিস্টি। বাংলাদেশেও এর চাষ শুরু হয়েছে, তবে এখন ফলন দেয়ার সময় নয়। এছাড়াও রয়েছে থাইল্যান্ডের আতা ফল। ৮০০ টাকা কেজি মূল্যে বিক্রি হচ্ছে এই আতাফল। একই দামে বিক্রি হচ্ছে মিশরের কাঁচা খেজুর। বিশেষ এই খেজুরটি আকারে সাধারণ খেজুরের তুলনায় অনেক বড় এবং কাঁচা অবস্থাতেই খেতে হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের (আম গবেষণা কেন্দ্র) বৈজ্ঞানিক আবু সালেহ মো. ইউসুফ জানান, সূর্যডিম আমকে পৃথিবীর অন্যতম সবচেয়ে দামি আম বলা হয়। ইতোমধ্যে বাংলাদেশেও এর পরীক্ষামূলভাবে চাষাবাদ শুরু হয়েছে। তবে শুধুমাত্র আমের মৌসুমে সূর্যডিম আমের ফলন পাওয়া যায়। অস্ট্রেলিয়ায় এখন আমের মৌসুম, তাই এই আমের ফলন হয়েছে। সেখান থেকে এনে ব্যবসায়ীরা উচ্চমূল্যে এই আম বিক্রি করছেন।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo