• বিশেষ প্রতিবেদন
  • লিড নিউজ

চায়ের চুমুকে কাঞ্চনজঙ্ঘা

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • লিড নিউজ
  • ২৮ নভেম্বর, ২০২১ ১৩:১৫:৩৯

ছবিঃ

তেঁতুলিয়া প্রতিনিধিঃ  ভোরের চায়ের চুমুকে পর্যটকদের কাছে উপভোগ্য হয়ে উঠেছে শ্বেতশুভ্র বরফের পাহাড় কাঞ্চনজঙ্ঘা। দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে বিনা পাসপোর্টে কাছ থেকে দেখা যায় মোহনীয় সৌন্দর্য পর্বতযুগল হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা। দেশের একমাত্র জায়গা সেটি সেটি হচ্ছে উত্তরের পর্যটননগরী পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া। প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সাথে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা তৈরি করেছে কাঞ্চনজঙ্ঘা। অক্টোবর-ডিসেম্বর ও মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে মেঘমুক্ত আকাশে দেখা যাওয়ার সুবাধে পর্যটকের ঢল নামছে এ অঞ্চলে।

সুদীর্ঘকাল ধরেই ভ্রমণ পিপাসুদের আকাঙ্খা কাঞ্চনজঙ্ঘার এ রূপমাধুর্য কাছ থেকে দেখার। প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটক পাড়ি জমায় ভারত ও নেপালে। যারা পাসপোর্ট ছাড়া নেপাল-ভারতের যাওয়ার সুযোগ নেই, তারা দেশের মাটিতে তেঁতুলিয়ায় এসেই বিনা পাসপোর্টে দেখতে পাচ্ছেন। লাগছে না কোন দুরবীক্ষণ কিংবা বাইনাকুলার। সাধারণ স্মার্টফোনের ক্যামেরাতেই ধারণ করা যায় ঝকঝকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য। এ সুযোগ একমাত্র হিমালয়কন্যা খ্যাত পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকেই।

পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা। এটি হিমালয়ের পর্বতের দ্বিতীয়। যার উচ্চতা ৮ হাজার ৫৮৬ মিটার। ভারতের সিকিম ও নেপাল জুড়ে অবস্থান হওয়ায় ভারতের শৈল্য শহর দার্জিলিং, ঘুম বা কালিম্পংয়ের প্রধান আকর্ষণ এই পর্বতশৃঙ্গ। উত্তরের তেঁতুলিয়া ভারত-নেপালের খুব কাছাকাছি থাকার কারণে কাছ থেকেই পরিস্কারভাবে সাদা বরফে আচ্ছাদিত পর্বতমালাটি দেখা যায়। এখান থেকে দেখা যায় পর্বতমালার নীচে থাকা শহরের ঘরবাড়ি, আলো, গাড়ি চলাচলও।

ভোরের সূর্যোদয়ের ঘুমন্ত মানুষের মতো জেগে উঠে বরফের পাহাড় কাঞ্চনজঙ্ঘা। রং পাল্টাতে থাকে ক্ষণে ক্ষণে। দিনভর নানা রং নিয়ে খেলা করে কাঞ্চনজংঘা। জেগে ওঠার শুরুতে টকটকে লাল। সূর্য ওঠার সাথে সাথে কমলা, তারপর হলুদ, তারপর সাদা। মনে হয় হাসছে পাহাড়। অপার সৌন্দর্য্যরে বিস্তৃতি ঘটিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে । তার শরীর ঘেষে চলে গেছে বিস্তৃত হিমালয়। সবুজ আর কালো রং মেখে হিমালয়ও হয়ে ওঠে অপরুপ। সুদীর্ঘকাল ধরে সকালে চায়ের চুমুকে উষ্ণতা নিয়ে উপভোগ্য হয়ে উঠে কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য।

ডাকবাংলোর পিকনিক কর্ণারে চা চুমুক দিতে কাঞ্চনজঙ্ঘা উপভোগ করতে দেখা যায় ঢাকা থেকে আসা সাংবাদিক মনসুর আহমেদ, মুহাম্মদ আলমসহ সহচর পর্যটকদের। তারা জানান, সত্যিই কাঞ্চনজঙ্ঘার অসাধারণ দৃশ্য। ক্ষণে ক্ষণে রং পাল্টানো, বিভিন্ন রং ধারণ করে মুগ্ধতায় ভরে দিয়েছে। দুদিন ধরে উপভোগ করছি, সময় পেলে আবারও চলে আসবো ভোরে চায়ের চুমুকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে।

মেঘ আর কুয়াশার কারণে হঠাৎ হারিয়ে যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা। মেঘের আচলে লুকিয়ে পড়ে। মেঘ সরে গেলে আবার উঁকি দেয়। লুকোচুরির খেলা চলে সারাদিন। কুয়াশা-মেঘের লুকোচুরিতে আড়াল- দৃশ্যমান খেলছে এ পর্বত যুগল। ভাগ্যগুণে কেউ দেখতে পাচ্ছেন, আবার কেউ না দেখতে পেয়ে হতাশ হচ্ছেন। এ জন্য অনেকে বলে থাকেন কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার জন্য কপালও লাগে।

কথা হয় পর্যটক আরিফ জামান, আশিক মাহমুদ, আরমান ও শিবলী সাদিকের সাথে। তারা জানান, ঢাকা, গাজীপুর ও ময়মনসিংহ থেকে আমরা ক’জন আশা নিয়ে কাছ থেকে হিমালয়- কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে ছুটে এসেছি। কিন্তু দুদিন অবস্থান করেও কুয়াশার কারণে ভাগ্য প্রসন্ন হয়নি দেখার। একই কথা বলেন বগুড়া থেকে আসা মুহাম্মদ আব্দুল হান্নান, মোবাশ্বের রহমান ও টিপু রায়হান। তারা জানান, বড় আশা করে এসেও দেখতে পেলাম না।

ফটোগ্রাফার ফিরোজ আল সাবাহ জানান, ভোরের চায়ের চুমুকে কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপদর্শনে আনন্দ অনুভূতি বলে বুঝানো যাবে না। আমরা যারা স্থানীয়, তারা এভাবে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখে আসছি। তবে পর্যটকদের কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে আসার আগে আবহাওয়া বার্তা জেনে আসলে উপভোগ্য হয়ে উঠতে পারে। আমরা অনেক সময় অপেক্ষা করে থাকি, কখন কাঞ্চনজঙ্ঘা দৃশ্যমান হয়, কখন তার ভালো ছবি তুলতে পারবো। এ জন্য রাত থেকে সকাল পর্যন্ত তাবু নিয়েও অবস্থান করি।

এদিকে হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘার সাথে দেশের পর্যটন শিল্প হিসেবে সমতলের সবুজ চা বাগান, চারদেশীয় বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর, ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট, জিরোপয়েন্ট, বিজিবি-বিএসএফের জয়েন্ট রিট্রিট সেরিমনি, মোগল স্থাপনা মির্জাপুর শাহী মসজিদ, বোদেশ্বরী মন্দির, মহারাজা দিঘি, ভিতরগড় দুর্গনগরী ও পাথরের জাদুঘরের মতো জায়গাগুলোও মুগ্ধতাও ভরিয়ে দিবে।

ছবি : কাঞ্চনজঙ্ঘা
ফটোগ্রাফার- ফিরোজ আল সাবাহ

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo