• বিশেষ প্রতিবেদন

পাবনায় ঐতিহ্যবাহী রুহুলবিলের বাউৎ উৎসব অনুষ্ঠিত

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ২৭ নভেম্বর, ২০২১ ১৫:০৬:২৪

ছবিঃ সিএনআই

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি : কুয়াশায় ঢেকে আছে চরাচর। তীব্র কুয়াশা ফুঁড়ে উঁকি দিচ্ছে ভোরের আলো। সেই সাথে কনকনে ঠান্ডা। এ সব কিছুই উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ ছুটে চলছে মাছ শিকারের নেশায় রুহুল বিলের বাউৎ উৎসবে। পাবনার চাটমোহর ও ভাঙ্গুড়া উপজেলার মাঝে অবস্থিত এই রুহুল বিলে প্রতি বছর ই শীতের এই সময়ে, দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসে হাজার হাজার মানুষ ঐতিহ্যবাহী বাউৎ উৎসবে যোগ দিতে।

২৭ (নভেম্বর) শনিবার ভোর থেকেই মৎস শিকারিদের আনাগোনায় ভরে ওঠে রুহুল বিল। সবার হাতেই রয়েছে মাছ ধরার নানান উপকরণ। কেউ এসেছে পলো নিয়ে কেউ কেউ ধর্ম জাল ,চাক জাল কেউ বা আবার ঠেলা জালি নিয়ে । শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষই যোগ দিয়েছে মাছ ধরার এই প্রাচীনতম উৎসবে । টাঙ্গাইল,সিরাজগঞ্জ, নাটোর জেলা সহ পাবনার বিভিন্ন উপজেলার হাজার হাজার মানুষের এ যেন এক মিলন মেলা । কেউ মাছ পেয়েছে কেউ পায়নি কেউ বা ঠান্ডায় কাঁপছে হুহু করে । কিন্তু বাউৎ উৎসবের হাসি লেগে আছে সবার মুখেই ।

কিসের নেশায় এত দূর দুরন্ত থেকে এত কষ্ট করে ছুটে আসে মানুষ, জানতে চাইলে চাটমোহর উপজেলার বামন গ্রামের আব্দুল আলীম বলেন আমি অনেক ছোট বেলা থেকেই এই রুহুলবিলে পলো দিয়ে মাছ মারতে আসি। আমার মাছ ভাগ্য ভালো । খালি হাতে কখনো ফেরৎ যাইনি । ৫/৬ কেজির গজার মাছ ও পেয়েছি এই বিল থেকে।

এদিকে পাবনা থেকে আসা মকলেছুর আলীর কণ্ঠে ঝরে পরলো ক্ষোভ । মোখলেছুর আলী বলেন প্রতি বছর- ই আসি কিন্তু এখন আর আগের মত মাছ পাওয়া যায় না । স্থানীয় কিছু মানুষ গ্যাস ট্যাবলেট দিয়ে অসাধু উপায়ে বিল থেকে মাছ মেরে নেয় যার কারনে অনেক সময় খালি হাতেই আমাদের ফেরত যেতে হয় ।

টাঙ্গাইল জেলার ভুয়াপুর থেকে আসা আশিক মিয়া বলেন , শুনেছিলাম এই বিলের বাউৎ উৎসবের কথা । আমি এর আগে কখনো আসি নাই । শখ করেই মাছ ধরতে আসা। মাছ ও পেয়েছি খুব ভালো লাগতেছে । শীতের রাতে দূরের পথের কস্টকর জার্নি ভুলে গিয়েছি ।

মাছ ধরার এই উৎসব নিয়ে ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বলেন, পাবনার ভাঙ্গুড়া ও চাটমোহর উপজেলার বেশ কিছু অংশ নিয়ে ঐতিহ্যবাহি রুহুল বিলের অবস্থান। প্রত্যেক বছর ই এই বাউৎ উৎসব হয় । হাজার হাজার শৌখিন মাছ শিকারিরা শীতের এই সময়ে এ উৎসব পালন করে থাকেন। এই অঞ্চলের মানুষের এটি একটি অতি পুরোনো উৎসব। বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ মিলিত হয়ে মাছ শিকারের এই উৎসব আজও টিকিয়ে রেখেছেন এই অঞ্চলবাসী। দেশীয় মাছ রক্ষার্থে বর্তমান সরকারও বিভিন্ন কাজ করছে। এই ঐতিহ্যবাহি বাউৎ উৎসব যেন বিলুপ্ত না হয়ে যায় সবাইকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। মাছের অভয়ারণ্য হিসাবে এই বিলের যে অংশ সংরক্ষণ করা আছে সেখানে যেন কেউ মাছ না ধরে সে বিষয়েও আমাদের সচেতন হওয়া দরকার ।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo