• বিশেষ প্রতিবেদন

পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকায় মসলা চাষে কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ২৫ নভেম্বর, ২০২১ ১৫:৪৮:১৩

ছবিঃ সিএনআই

রাঙ্গামাটি জেলা প্রতিনিধিঃ তিন পার্বত্য জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় উচ্চ মূল্যের মসলা চাষে স্থানীয় কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে।এ এলাকার জমি মসলা জাতীয় ফসল ও ফলের বাগানের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।এরই ধারাবাহিকতায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড পার্বত্য এলাকার প্রান্তিক কৃষকদের জন্য গ্রহণ করেছে উচ্চ মূল্যের মসলা চাষ প্রকল্প।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এক সময় পাহাড়ে মসলা বলতে শুধু আদা, হলুদের চাষকে বুঝাত। কিন্তু এখন পাহাড়ের কৃষকরা জুম চাষের পাশাপাশি বিভিন্ন রকমের উচ্চ মূল্যের মসলা চাষের দিকে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। এবং অনেক কৃষক মনে করছেন এই মসলা চাষের মাধ্যমে তারা অধিক লাভবান হবেন এবং এর থেকে তারা অর্থনৈতিক মুক্তি পাবে।পরিবশেবিদদের মতে,পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার আবহাওয়া বিবেচনায়, এখানে উদ্যান ও মসলা জাতীয় ফসল আবাদের অনেক সুযোগ রয়েছে। দরিদ্র এবং প্রান্তিক কৃষকদের উদ্যান ও মসলা জাতীয় ফসল আবাদে কৃষকদের সম্পৃক্ত করা সবচেয়ে ভাল উদ্যেগ।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় উচ্চ মূল্যের মসলা চাষ’ প্রকল্পটি একটি পাইলট প্রকল্প। প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত চারবছর পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ। পাটইলট প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ কোটি ৮৭ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা।পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় উন্নত জাতের উচ্চ মূল্যের মসলা যেমন-দারুচিনি, তেজপাতা, আলুবোখারা, গোলমরিচ, জুম মরিচ, ধনিয়া, বিলাতি ধনিয়া ইত্যাদি চাষাবাদ করে দেশের চাহিদা পূরণ করা যাবে। এসব ফসলের আবাদের ফলে কৃষকগণ লাভবান হবেন এবং তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোড জানিয়েছেন,এ প্রকল্পের আওতায় তিন পার্বত্য জেলা ২ হাজার ৬শ জন কৃষককে মসলা চাষের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এবংপ্রকল্পের সাথে সম্পৃক্ত কৃষকদের বিনামূল্যে আলুবোখরা, দারুচিনি, তেজপাতা, গোলমরিচ ইত্যাদি মসলার চারা-কলমও প্রদান করা হয় এর পাশাপাশি তাদেরকে প্রয়োজনীয় কৃষি যন্ত্রপাতি, সার ও রোপন কৌশল সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। স্বল্প সময়ে আয়ের জন্য কৃষকদেরকে সাথী ফসল হিসাবে পেঁপে চারা, উন্নত জাতের পেয়ারা ও জলপাই চারাও প্রদান করা হয়েছে।

রাঙামাটি পার্বত্য জেলার প্রত্যন্ত এলাকার মসলা বাগান সৃজনকারী চাষীরা জানান, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড থেকে আমরা উচ্চ মূল্যের মসলা চাষ করার জন্য দারুচিনি,গোলমরিচ,তেজপাতার চারা ,সার ওসেচ যন্ত্রপাতি দিয়েছে।

আমরা এখন জুমচাষ বাদ দিয়ে মসলা চাষ করছি। আশা করছি এই মসলা চাষে আমরা লাভবান হব। আমাদের সৃজিত বাগান দেখে এলাকার অনেকেই মসলা বাগান করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় আমরা আমাদের বাগানে দারুচিনি,আলুবোকরা ও পেঁপে ও পেয়ারা বাগান করেছি।আমরা উন্নয়ন বোর্ডকে ধন্যবাদ জানাই আমাদেরকে মসলা চাষের বাগান করার জন্য সহযোগিতা করায়।

এদিকে, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের মসলা চাষ প্রকল্পের রাঙামাটির কর্মকর্তা জানান, এখানকার কৃষকরা তারা আগে জুম চাষ করতো বিশেষ করে পার্বত্য অঞ্চলে মসলা চাষ সম্পর্কে কোন ধারনা ছিলনা। এই প্রকল্পটি শুরু হওয়ার পর কৃষকদেরকে প্রথমে আমরা উদ্বুদ্ধ করি যে, আপনারাতো জুম চাষ করেন জুম চাষের পরিবর্তে মসলা চাষ করেন। কৃষকদরে আমরা কিভাবে চারা রোপন করতে হয়,জৈব সার বীজ করতে এগুলো হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এ মসলা চাষ প্রকল্পটি একটি ব্যাতিক্রমধর্মী প্রকল্প।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পাহাড়ের দূর্গম এলাকায় কম ওজনের উচ্চ মূল্যের ফসলের চাষ করার নির্দেশনায় দিয়েছে। সে নির্দেশনা মোতাবেক আমরা পার্বত্য অঞ্চলের প্রত্যন্ত এলাকায় কৃষকরা যাতে মসলা চাষ করে অধিক লাভবান হতে পারে সে উদ্যেগে নিয়েছি এ প্রকল্পের মাধ্যমে তুলনামুলক দুর্গম স্থানে উচ্চ মূল্যের ও কম ওজনদার মসলা ফসল চাষাবাদের সুযোগ রয়েছে। এসব ফসল কম ওজনদার, দীর্ঘদিন সংরক্ষণযোগ্য ও মূল্যবান হওয়ায় কৃষকগণ নিজ ঘরে তা সংরক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সময়ে সহজে দূরের বাজারে নিয়ে বিক্রি করে অধিক অর্থ পেতে পারে।

এটি হচ্ছে একটি পাইলট প্রকল্প । পরবর্তীতে এই প্রকল্পের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বড় আকারে পার্বত্য চট্টগ্রামের কৃষকদের জন্য মসলা চাষ প্রকল্পটি হাতে নিতে পারবো। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় উচ্চ মূল্যের মসলা চাষ’ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো: শফিকুল ইসলাম বলেন, পাহাড়ে এখনো অনেক অনাবাদী জমি রয়েছে যেখানে মসলা চাষের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। দেশে মসলার যে চাহিদা এবং আমদানীর মধ্যে অনেক ঘাটতি রয়েছে।এ ঘাটতি পূরণ করার জন্য বর্তমান সরকার এ প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে। এই মসলা চাষ প্রকল্পটি রাঙমাটি,খাগড়াছড়িও বান্দরবান তিন পার্বত্য জেলায় রয়েছে। এ প্রকল্পে রয়েছে আলু বোকরা,তেজপাতা ও গোল মরিচ। আমরা এই মসলা চাষ প্রকল্পে সাথী ফসল হিসেবে কৃষকদের পেয়ারা এবং পেঁপে চারা দিয়েছি।

পেয়ারা এবং পেঁপে থেকে কৃষকরা ছয়মাস থেকে এক বছরের মধ্যে লাভবান হচ্ছে। এসব মসলা গুলোর চাহিদা আমাদের দেশে অনেক বেশি। এর চাহিদা পূরণ করতে পারলে আমরা দেশে আমদানী নির্ভরতা কমাতে পারবো। পাহাড়ের কৃষকরা কিন্তু খুবই উৎসাহী মসলা চাষে। অনেক কৃষক ইতিমধ্যে আলু বোকরার নার্সারী করে চারা কলম নিজেরাই বিক্রয় করছে।

এ প্রসঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি বর্তমানে আর্থ-সামজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কৃষিভিত্তিক বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।এরই ধারাবাহিকতায় পার্বত্য চট্টগ্রামের দূর্গম এলাকায় উচ্চ মূল্যের মসলা চাষ তেমনই একটি পাইলট প্রকল্প। তিনি আরো বলেন- আমরা চেষ্টা করেছি। এলাকার যারা প্রান্তিক জনগণ আছে তাদেরকে কিভাবে আরো অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি করা যায়। আর এই প্রকল্পের সফলতা হলে দীর্ঘ মেয়াদী প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo