• বিশেষ প্রতিবেদন
  • লিড নিউজ

মেয়াদোত্তীর্ণ রেল সেতু ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রেন

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • লিড নিউজ
  • ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৮:১৭:১৫

ছবিঃ সিএনআই


নজরুল ইসলাম রাজু, রংপুর ব্যুরো:  বৃটিশ আমলে নির্মিত তিস্তা নদীর উপর কাউনিয়ায় তিস্তা রেল সেতুটি।মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও ঝুঁকি নিয়ে চলছে ২টি আন্তঃনগরসহ ২০টি ট্রেন।তিস্তা নদীর ওপর ২ হাজার ১শত ১০ ফুট লম্বা তিস্তা রেলওয়ে সেতু নির্মাণ করেন তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার।তখন থেকে সংস্কারের মুখ দেখেনি এ সেতুটি।তবে রেল কৃর্তৃপক্ষ জানান সংস্কারের জন্য দরপত্র আহবান করা হয়েছে।বরাদ্ধ আসলে মেরামতসহ অতিদ্রুত সংস্কার করা হবে।

১৮৯৯- ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে তিস্তা নদীর উপর কাউনিয়ায় তিস্তা রেল সেতুটি নির্মিত হয়।দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম তিস্তা রেল সেতু হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি।সেতুটির উত্তর পাশে লালমনিরহাট-কুড়িগ্রাম ও দক্ষিণে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলা।

বর্তমান এই সেতুটির মেয়াদকাল ছিল একশত বছর।প্রায় ২০ বছর আগে সেতুটি মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জোড়াতালি দিয়ে প্রতিদিন পারাপার করছে ২০টি ট্রেন।সেতুটির রেলপথের অসংখ্য কাঠের স্লিপার  পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে।বিভিন্ন স্থানে রেললাইন থেকে কাঠের স্লিপার পুরোপুরি নষ্ট হয়ে  যাওয়ায় কারণে সেগুলো রয়েছে জরাজির্ণ ও ঝুলন্ত অবস্থায়। 

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে অন্য একটি সেতু থেকে স্প্যান,গার্ডার ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করে ১৯৭২ সালে তা মেরামত করা হয় এবং সেতুটি পুনরায় চালু করা হয়। ১৯৭৭ সালে রেলওয়ে ও সওজ বিভাগ যৌথভাবে রেল সেতুতে মিটারগেজ লাইনের পাশে ২৬০টি স্টিলের টাইফ প্লেট ও কাঠের পাটাতন স্থাপন করে।

দীর্ঘদিন পর্যন্ত সেতুটি কেবলমাত্র রেল যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছিল।সে সময় সড়ক যোগাযোগের জন্য বিকল্প একটি সেতু নির্মাণ করা হয়।অত্যন্ত ব্যয়বহুল ছিল বলে এর উপর দিয়ে সড়ক যোগাযোগ চালুর সম্ভাব্যতা ও উপযুক্ততা যাচাইয়ের পর ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দের ৪ মার্চ আনুষ্ঠানিক ভাবে সেতুটির উপর দিয়ে রেলওয়ের পাশাপাশি সড়ক যোগাযোগ শুরু করা হয়েছিল।তখন থেকে সেতু দিয়ে ট্রেন ও যাত্রীবাহী বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে আসছিল।এভাবে ক্রমেই সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হতে থাকে।

এর পরে ২০০১ সালে রেল সেতুর পাশে তিস্তা সড়ক সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর বতর্মান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিস্তা সড়ক সেতু উদ্বোধনের পর তা যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।আর সড়ক সেতু চালু হওয়ার পর রেল সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হলেও ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখা হয়।

বর্তমানে ১শত ২০ বছর বয়সের এ সেতুর মেয়াদকাল ধরা হয়েছিল ১০০ বছর।প্রায় ২০ বছর আগে সেতুটি মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জোড়াতালি দিয়ে প্রতিদিন পারাপার হয়ে থাকে ২০টি ট্রেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে,বেশিরভাগ কাঠের স্লিপারগুলো পঁচে নষ্ট হয়ে গিয়েছে্।বিভিন্ন স্থানে রেললাইন থেকে কাঠের স্লিপার পুরোপুরি নষ্ট।আবার অধিকাংশ রেলপথে ব্যবহৃত ক্লিপগুলো নেই এবং অনেক জায়গায় স্লিপারের সঙ্গে রেলপথ আটকানোর জন্য ব্যবহৃত লোহার প্লেটগুলো নেই।এছাড়াও সেতুর পাশে দুইসারির জোড়ায় ব্যবহৃত ফিসপ্লেটে চারটি নাট-বল্টু থাকার কথা থাকলেও সেখানে রয়েছে তিনটি আবার কোথাও দুটি করে দেখা গিয়েছে।

তিস্তা সেতু এলাকার হাসেম মিয়া, কাদের হোসেন, সাজ্জাদসহ অনেকে বলেন,তিস্তা সেতুটি দীর্ঘদিন থেকে অবহেলিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। মাঝে মাঝে লোকদেখানো কিছু কাজ করে থাকে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।প্রতিদিন এই সেতু দিয়ে ২০টি ট্রেনে চলাচল করে।হাজার হাজার ট্রেনে যাত্রী নিয়ে পারাপার হয়ে থাকে্।তাদের মতে সেতুটিতে অনেক যন্ত্রাংশ ত্রুটিপূর্ণ রয়েছে।রেলসেতুটি  অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বর্তমানে।তাই দুর্ঘটনা এড়াতে সেতুটির উন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান স্থানীয়রা। স্থানীয় ও ঢাকা যাওয়া ট্রেন যাত্রী ফারহাদ আলী ও শফিকুল ইসলাম জানান,দুর্ঘটনা এড়াতে সেতুটির উন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান।ঝুঁকিপূর্ণ রেল সেতুটি অতিদ্রুত সংস্কারের দাবি তাদের।ঝুঁকি নিয়ে যেতে হচ্ছে ঢাকায়।তিনি আরও বলেন,প্রতিদিন চলাচল করছে উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকাগামী ট্রেন।

স্থানীয় ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমান বলেন,প্রতি ৪-৫দিন পর পর এ সেতুর উপর দিয়ে ঢাকায় যেতে হচ্ছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।কখন দুঘটনায় পরতে হবে আল্লাহ ভালো যানেন।সেতুটি নষ্ট হয়ে গেলে উত্তরাঞ্চলের সাথে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার আশংকা করেন।অতিদ্রুত সংস্কারের দাবি উত্তরাঞ্চল বাসির।

এ বিষয়ে রংপুর বিভাগীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপক শাহ সুফী নুর মোহাম্মদ জানান,তিস্তা সেতু মেরামত করা হয়।তার পরও দুই একটা ফিটিংসের সমস্যা থাকতেই পারে।তবে সেতুটিতে ট্রেন চলাচলে খুব বেশি সমস্যা নেই।সামনে আমাদের একটি প্রজেক্ট আছে সেখানে ডাবল ব্রডগেজ সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। ব্রডগেজ সেতু নির্মাণের কাজ হলে আর এই সেতুটি ব্যবহার করা হবেনা।

রংপুর বিভাগীয় অতিরিক্ত কমিশনার মো:জাকির হোসেন জানান,দেশের দ্বিতীয় তিস্তা সেতুটি বৃটিশ আমলে নির্মিত হয়েছে।এ সেতু দিয়ে রংপুর-লালমনিরহাট-কুড়িগ্রাম-স্থলবন্ধরে চলে ট্রেন।সেতুটি অধিকগুত্বপুর্ণ হওয়ায় রেল কৃর্তপক্ষের ব্যবস্থা নেওয়া জন্য বলা হবে।আর সেতুর নির্মান ও সংস্কার করার বিষয়ে রেল মন্ত্রনালয়ে জানানো হবে।অতিদ্রুত সংস্কার করে উপযোগি করা হবে।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo