• বিশেষ প্রতিবেদন

হরিরামপুরে এবার পদ্মার ভয়াল থাবার মুখে আজিমনগর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ০১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৭:৫১:১০

ছবিঃ সিএনআই

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধিঃ পদ্মা যুমনার অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে পানির তোড়ে এবাব ভয়াল থাবার মুখে পড়েছে মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের দুর্গম চরাঞ্চলের আজিমনগর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়। গত ২৮ আগষ্ট (শনিবার) দিবাগত রাত ১১টার দিকে চরাঞ্চলের তিনটি ইউনিয়নের জনগণের একমাত্র চিকিৎসা সেবার অবলম্বন হাতিঘাটা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রটি সম্পূর্ণরূপে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ফলে নতুন করে হাতিঘাটার জনমনে ভাঙন আতংক বিরাজ করছে। এখন নদী তীরবর্তী থেকে প্রায় ১৩০ মিটার দূরে রয়েছে এই আজিমনগর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়টি। বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির একতলা ভবনের ওপর থেকে নতুন করে আরও তিনতলা পর্যন্ত বৃদ্ধির লক্ষে ভবনটির নির্মাণাধীন কাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু আকস্মিক পদ্মার পানি বৃদ্ধিতে তীব্র স্রোতের কারণে চরাঞ্চলে নতুন করে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর ফলে আজিমনগর ইউনিয়ন বিদ্যালয় সংলগ্ন স্বাস্থ্য ও পরিবার আছে কেন্দ্রটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেলে নড়েচড়ে বসে মানিকগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।

আজ মঙ্গলবার (৩১ আগষ্ট) সকাল ৭টায় আজিমনগর ইউনিয়নের চরাঞ্চল পরিদর্শনে আসেন মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাইন উদ্দিন, হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের হরিরামপুর উপজেলার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. সবুজ হোসেন, আজিমনগর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আওলাদ হোসেন বিপ্লব।

বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, দুর্গম চরাঞ্চল আজিমনগর ইউনিয়নের হাতিঘাটায় ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আজিমনগর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়। ওই সময় বিদ্যালয়টি এডিবি'র অর্থায়নে টিনসেটের ১৫টি রুম তৈরির মধ্যদিয়ে যাত্রা শুরু হয়।

হরিরামপুর উপজেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, আজিমনগর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়টির উন্নয়নের লক্ষে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৬৬ লাখ ৯৭ হাজার টাকা ব্যয়ে শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে চারতলা ফাউন্ডেশনে একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৯-২০ অর্থ বছরের ১ কোটি ২৩ লাখ  ৫০ হাজার বরাদ্দে পুনরায় শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে ওই একতলার ওপরেই আরও তিনতলা ভবনের অনুমোদন দেয়া হয়। অনুমোদিত নতুন ভবনের কাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু কাজ শেষ না হতেই এখন ভাঙনে মুখে এই বিদ্যালয়টি।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের হরিরামপুর উপজেলার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. সবুজ হোসেন জানান, আজ ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শনে আসেন জেলা প্রশাসক মহোদয়। পরিদর্শন শেষে বিদ্যালয়টি রক্ষায় ভাঙনরোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।

হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম জানান, আজ সকালে জেলা প্রশাসক মহোদয় ও জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আজিমনগর ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চলে ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক মহোদয় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।

মানিকগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাইন উদ্দিন জানান, "আজ সকালে জেলা প্রশাসক মহাদয়সহ  আজিমনগর ইউনিয়নে ভাঙন কবলিত স্থান পরিদর্শন করেছি। পরিদর্শন শেষে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী বরাবর রিপোর্টও পাঠিয়ে দিয়েছি। তবে আমি আজ যে অবস্থা দেখে এসেছি, তাতে  তীব্র স্রোতের কারণে এই মূহুর্তে বলগেট নিয়ে বালি ফেলা সম্ভব হবে না। তবে মন্ত্রী মহোদয় আমার চীপ ইঞ্জিনিয়ার এঁর সাথে আলোচনা করে যে সিদ্ধান্ত জানাবে, আমরা সেভাবেই ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করব।" বর্তমান ঝুকিপূর্ণ নদীর তীরবর্তী থেকে প্রায় ১৩০মিটার দূরে অবস্থিত আজিমনগর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ভবনের কাজ বন্ধ রাখার জন্য তিন দিন আগে জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছেন বলেও তিনি জানান।

উল্লেখ্য, ভাঙনের ঝুঁকির মধ্য আরও রয়েছে ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত আজিমনগর ইউনিয়নের ৭নং ও ৮ নং ওয়ার্ডের হাতিঘাটায় ২টি আশ্রয়ন কেন্দ্র ( ৭ নং ওয়ার্ডের হাতিঘাটা পশ্চিমপাড়া আশ্রয়ন কেন্দ্র ১০০টি পরিবার ও ৮ নং ওয়ার্ডের পূর্বপাড়ার আশ্রয়ন কেন্দ্রে ৯০টি পরিবারসহ মোট ১৯০টি পরিবার বসবাস করে এই দুই আশ্রয়ন কেন্দ্র), শোয়াখাড়া আদর্শ গ্রাম (৫০ টি পরিবার বসবাস করে), হাতিঘাটা বাজার, ৫৭নং হারুকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,  ইব্রাহিমপুর জামে মসজিদ ও মাদ্রাসা।

এছাড়াও প্রায় ১৫ দিন আগে পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে সুতালড়ী ইউনিয়নের ৩৭ নং রামচন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo