• বিশেষ প্রতিবেদন
  • লিড নিউজ

মাঠ কাঁপানো ফুটবলারের মানবেতর জীবন!  

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • লিড নিউজ
  • ৩১ জুলাই, ২০২১ ১০:৪৮:৫৪

ছবিঃ সিএনআই

নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধি : বগুড়ার নন্দীগ্রামের ৮০ দশকের ফুটবল ভক্তদের কাছে খুব পরিচিত নাম ফেরদৌস টিম। শুধু নন্দীগ্রামেই না সমগ্র উত্তরবঙ্গে খ্যাতি ছিল ফেরদৌস টিমের। ফেরদৌস টিমের সংগঠক ও অধিনায়ক ছিলেন ফেরদৌস রহমান। দৃষ্টিনন্দন ক্রীড়া নৈপুণ্য দীর্ঘ সময় দর্শকদের মাঠে ধরে রেখেছিল এই খেলয়ার।

একটা সময় ছিলো ফেরদৌস টিমের খেলা দেখার জন্য হাজার হাজার দর্শক ফুটবল মাঠে উপস্থিত হতো। আর খেলার মাঠে যখন ফেরদৌসের পায়ে বল আসে তখন দর্শকদের করতালি ও উম্মাদনায় কেঁপে উঠতো মাঠ। দর্শকদের ভাবনা এই বুঝি গোল হয়েছে। 

ফেরদৌস রহমান টিম নিয়ে ও ব্যক্তিগত ভাবে উত্তরবঙ্গ তথা দেশের বিভিন্ন জেলার বড় বড় মাঠে ফুটবল খেলেছেন। তিনি ঢাকার ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের হয়েও অনেক ফুটবল ম্যাচ খেলেছেন। কৃতি এই ফুটবলার বেশি ভাগ খেলায় জয় লাভ করেছে। দলের হয়ে এবং ব্যক্তিগত ভাবে পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। অনেক খেলায় সে একক প্রচেষ্টায় দলকে বিজয়ী করেছেন। আর অদৃষ্টের কী পরিহাস! বাস্তব জীবনে এই খেলয়ার বার বার পরাজিত হয়েছে। ফুটবলের জন্য নিজের সহায় সম্পত্তি সব শেষ করে দিয়েছেন। এর মাঝে ইউপি সদস্য
পদে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছে কয়েক বার।

স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তার সংসার। সংসারে টানাপোড়েনের কারনে ঢাকা গার্মেন্টসসহ অনেক ছোট পদে চাকুরী করেছেন তিনি। সর্বশেষ করোনার কারনে চাকুরী হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন বাড়িতে বসে। এখন তার জীবনে শুধুই হাহাকার। জানতে চাইলে ফেরদৌস রহমান বলেন, আমার বাড়ি সিংড়া উপজেলায় হরিণী
গ্রামে হলেও আমার জীবনের বেশির ভাগ সময় কেটে গেছে নন্দীগ্রামে। ছোটবেলা থেকেই ফুটবল খেলতে আমার খুব ভালো লাগতো। ১৯৮৪ সালে নন্দীগ্রাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় হতে এসএসসি পাশের পর আমি আমার বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে একটি ফুটবল টিম গঠন করি। যা পরবর্তীতে নাম করা হয় ফেরদৌস টিম।

ওই সময় আমার সাথে খেলেছে সুরেন, সিরাজ, স্যন্নাসি, বকুল, আকরাম, নান্টু, মাহাবুব, ওবাইদুর ও মুন্টুসহ অনেকেই। সেই সোনালি অতিতের কথা মনে হলে চোখে পানি এসে যায়। নিজের সব শেষ করে তিলে তিলে গড়ে তুলে ছিলাম ফেরদৌস টিম। যেখানেই ফেরদৌস টিমের খেলা সেখানেই হাজার হাজার দর্শকের উপস্থিতি।

আমরা সবচেয়ে বড় জয় পেয়েছি দিনাজপুর জেলার হিলির খেলাতে। সেখানে হাজার হাজার দর্শক। ফাইনাল ম্যাচে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আমাদের খেলা। তাদের দলে ছিল অনেক ভালো ভালো খেলয়ার। সেখানে কয়েকজন জাতীয় দলের খেলয়ারও ছিলো। ওই খেলায় আমরা ৩-১ গোলে জয় লাভ করেছিলাম। তিনি আরো বলেন, বউ, ছেলে-মেয়ে নিয়ে সংসার চালাতে পারছিলাম না। তাই ঢাকা গিয়ে গার্মেন্টসে কাজ করলাম। আবার প্রাণ কোম্পানিতে কাজ করলাম। করোনার শুরুতে বাড়িতে এসেছি। এখন বাড়িতেই বসে বসে দিন কাটাচ্ছি।

এখন সংসার কি ভাবে চলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ছেলে ছোট একটা দোকান করেছে। এতে যা হয় তাই দিয়ে কোন ভাবে দিন পার হয়ে যাচ্ছে। মেয়েটা নন্দীগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজে পড়াশোনা করে।

খেলয়ার ভাতা, সরকারি ও বেসরকারি কোন সুবিধা পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কখনও কোন খেলয়ার ভাতা, সরকারি ও বেসরকারি সুবিধা পাইনি। ছেলে-মেয়ের জন্য কিছুই করে দিতে পারলাম না। আর বাঁকী জীবন কি ভাবে কাটবে তা জানিনা।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo