নিউজ ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ফরিদপুরের নয়টি উপজেলায় এ পর্যন্ত ৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩ হাজার ৬০৭ ভূমিহীন ছিন্নমূল পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয় ওই ঘরের জমিও তাদের নামে রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়েছে। এখনও সামান্য কিছু ঘরের কাজ বাকি আছে। অনেক ঘরে এরই মধ্যে বরাদ্দপ্রাপ্তরা উঠে পড়েছেন। এ তথ্য ফরিদপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যাদের জমি নেই, ঘর নেই এমন পরিবারগুলোর ঠাঁই মিলেছে এসব ঘরগুলোতে। তাই জমির সঙ্গে পাকা ঘর পেয়ে নতুন মাত্রায় এবারের ঈদ আনন্দ উপভোগ করছেন নতুন স্বপ্নের ঠিকানায় ঠাঁই পাওয়া হাজার হাজার পরিবারগুলো। ভিটা-বাড়িশূন্য মানুষের জন্য বিষয়টি স্বপ্নের মতো। নীড়হারা আশ্রয়হীন মানুষগুলো খুঁজে পেয়েছে তাদের স্বপ্নের ঠিকানা।
এবারের ঈদ এসব ‘স্বপ্ননগর’ বাসিন্দাদের কাছে বড়ই আনন্দের! তাদের কাছে এবারের ঈদ যেন ডাবল ঈদ হিসেবে ধরা দিয়েছে। একদিকে স্বপ্নের ঠিকানা অন্যদিকে ঈদ। প্রত্যেক পরিবারে যেন ডাবল খুশি। যেন ডাবল ঈদ আনন্দ। প্রত্যেকটি ঘর যেন ভূমি ও গৃহহীন মানুষের কাছে স্বপ্নের ঠিকানা, পরম নির্ভরতার স্থান।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের এসব বাড়িতে নতুন ঠিকানা তৈরি করা বাসিন্দাদের স্বপ্নের ঠিকানায় সরেজমিনে গিয়ে তাদের ডাবল ঈদ আর খুশির কথা জানা গেছে। বোয়ালমারী উপজেলার চতুল ইউনিয়নের সুকদেবনগর গ্রামের ৬৫ বছর বয়সী বিধবা নারী রাহেলা বেগম একজন স্বপ্নের ঠিকানার বাসিন্দা।
তিনি বলেন, ‘নিজের একখান ঘর হবে, জমি হবে কখনও স্বপ্নেও ভাবিনি। জীবনে এই পথমবারের মতো একটা নয় একসাথে দুইটা ঈদ মনে হচ্ছে। আব্দুস সামাদ শেখের স্ত্রী সালেহা বেগম বলেন, আমাদের মতো গরিবের জীবন তো পথে পথেই শেষ হয়ে যায়। কেউ হয়ত বিপদের সময় চাইল, ডাইল, কাপড় দেয়; কিন্তু জমির সাথে ঘর দিয়ার কথা শুনি নাই। শেখ হাসিনা আমাদের জন্য এই ব্যবস্থা করে দিছে। আমরা তার প্রতি চিরদিনের জন্য কৃতজ্ঞ। আল্লাহ উনারে আরও অনেকদিন বাঁচায় রাখুক।’
মঙ্গলবার (২০ জুলাই) দিন ব্যাপী ফরিদপুরের বিভিন্ন স্থানে ‘স্বপ্ননগর’ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সড়কের দু’পাশে সারিবদ্ধ লাল রঙের টিনের সেমিপাকা ঘরগুলো এলাকাকে আরও মোহনীয় করে তুলেছে। যেন দৃষ্টি এড়ায় না পথিকদেরও। দুই কক্ষবিশিষ্ট এসব বাড়িতে রয়েছে একটি রান্নাঘর, শৌচাগার ও স্টোর রুম। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া স্বপ্নের বাড়িতে ইতোমধ্যে উপকারভোগী যারা উঠেছেন তারা তাদের সন্তানাদি নিয়ে আনন্দে দিন কাটাচ্ছেন। কেউ কেউ শোভাবর্ধণের জন্য ঘরের আঙিনায় লাগিয়েছেন ফুল ও ফলের গাছ। ঘরঘেঁষে তৈরি করছেন আলাদা আরও প্রয়োজনীয় গুদামঘর। শিশুরা খেলাধুলা করছে। নারীরা নিজ নিজ ঘর গোছাতে ব্যস্ত। সবাই খুব উৎফুল্ল, আনন্দিত। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সারাদিন মাঠে-ঘাটে পরিশ্রম করে নিজের বাড়িতে থাকতে পারবে এর চেয়ে খুশির আর কি হতে পারে। এসময় তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দীর্ঘায়ু ও দোয়া কামনা করেন।
সালথা এলাকার নুর জাহান বেগম নামে এক নারী জানান, আমার স্বামী ভ্যান চালায়। আমাদের চার ছেলে-মেয়ে নিয়ে আগে অন্যের বাড়িতে থাকতাম। পরের বাড়ি থাইকে ঈদের আনন্দ করতি পারতাম না। ছেলে-মেয়েরা প্রাণ খুলে হাসতে পারতো না, খেলতে পারতো না। এইবার সরকার আমাগে একটা ঘর দিছে। অনেক আনন্দে নিজের বাড়িতে ঈদ করবো।
সদর উপজেলার কানাইপুরে ইব্রাহিমদি গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সাতটি সারিতে ২৮টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ঘরগুলোতে এরই মধ্যে অনেকেই মালামাল নিয়ে বসবাস শুরু করেছেন। মঙ্গলবার সকালে গিয়ে দেখা গেল সেখানকার বাসিন্দারা কেউ ঘর গোছাচ্ছেন, কেউ রান্নাবান্নায় ব্যস্ত। ঘরের কোনার জমিতে এরই মধ্যে নানা জাতের ফুলের গাছসহ ফলদ ও বনজ গাছ রোপন করেছেন অনেকে।
ফরিদপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুম রেজা জানান, একদিন যে মানুষগুলোর কোনো ঠিকানা ছিল না, ছিল না বসবাসের জন্য এক টুকরো ভূমি, মাথার উপরে একটি ছাদ, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পাকা ঘর পেয়ে প্রত্যেক উপকারভোগী ও তার পরিবারে নেমে এসেছে আনন্দের বন্যা। তাদের চোখে মুখে আজ পরিতৃপ্তির হাসি। অনেকের জীবনে এবারকার ঈদ ধরা দিয়েছে এক পরম পাওয়ার ঈদ তাদের কাছে যেন দুইটা খুশি দুইটা আনন্দ একসাথে অন্যরকম উৎসবে পরিণত হয়েছে।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে আলফাডাঙ্গায় স্বপ্ননগরী নামে নতুন একটি গ্রামের সৃষ্টি করা হয়েছে যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে শুরু করে মানুষের জীবন-জীবিকার জন্য হাটবাজারও তৈরি করা হয়েছে। অসহায় দরিদ্র মানুষগুলোর অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মত নয় শুধুই অনুভবের বিষয়।
তিনি আরও বলেন, এইসব মানুষ এখন নিজের জীবন বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখছে। ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা করানোর স্বপ্ন দেখছে। নিজের যে একটি স্থায়ী ঠিকানা সেটি তারা খুঁজে পেয়েছে। এর মাধ্যমে তাদের মৌলিক অধিকার বাসস্থান নিশ্চিত হয়েছে।
তিনি বলেন, এই কোভিড-১৯ সমস্যা মোকাবেলায় আমরা তাদের ঘরে খাবার পৌঁছে দিচ্ছি। এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের চোখে মুখে এখন পরিতৃপ্তির হাসি। অনেকের জীবনে এবারকার ঈদ ধরা দিয়েছে এক পরম পাওয়ার ঈদ হিসেবে।
মন্তব্য ( ০)