• প্রশাসন

লকডাউন: রাতের আধারে আব্দুল্লাহপুরে কঠোর অবস্থানে পুলিশ

  • প্রশাসন
  • ২৩ জুন, ২০২১ ১৭:৪৬:৫৪

ছবিঃ সিএনআই

নুরুল আমিন হাসান : করোনার মহামারী রোধে সরকার ঘোষিত লকডাউন বাস্তবায়নে রাতের আধারে রাজধানীর প্রবেশপথ উত্তরার আব্দুল্লাহপুরে ছিল পুলিশের কঠোর অবস্থান। এ সময় রাজধানীতে কোন আন্তঃজেলা বাস প্রবেশ কিংবা বাহির হতে দেওয়া হয়নি। যদিও এতে প্রচণ্ড দুর্ভোগে পরেন দূর দূরান্ত থেকে আগত যাত্রীরা। অপরদিকে হটাৎ করে লকডাউনের কারণে আব্দুল্লাহপুরের কাউন্টার মাস্টাররা পরেন বেকায়দায়। 

আব্দুল্লাহপুর সড়কে মঙ্গলবার (২২ জুন) সন্ধ্যা থেকে বুধবার (২৩ জুন) গভীর রাত পর্যন্ত সরেজমিনে দেখে এবং কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের সাথে কথা বলে এসব এমন তথ্য জানা যায় যায়। 

সরেজমিনে দেখা যায়, গাজীপুর থেকে আন্তঃজেলা বাস রাজধানীর অন্যতম প্রবেশপথ আব্দুল্লাহপুরে আসতে দেখা যায়নি। যেসব প্রাইভেটকারে যাত্রী পরিবহণ করা হচ্ছে তাদের সবাইকেই জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। শুধুমাত্র জরুরী প্রয়োজনীয় যাত্রীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া বাকি গাড়ীগুলো ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

অপরদিকে রাজধানী থেকে বাহির হওয়ার একই পথ দিয়ে কোন আন্তঃজেলা বাস বের হতে দেখা যায়নি। যেসব আন্তঃজেলা বাস রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে যেসব বাস বিভিন্ন জেলায় যাওয়ার জন্য এসেছিল, তাদেরকে ঘুরিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি বাস পুলিশের সিগন্যাল অমান্য করে যাওয়ার চেষ্টা করলেও তাদেরকে পরবর্তী চেকপোস্টে আটকিয়ে দিয়ে সরকারী আদেশ অমান্যের অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

এদিকে মহাসড়কে আন্তঃজেলা বাস না থাকায় চরম দুর্ভোগে পরেন যাত্রীরা। তাদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। মো. আকবর হোসেন নামের একজন একজন রাজমিস্ত্রি বলেন, লকডাউন ঘোষণার আগে বাসে টিকেট কেটে রাখছিলাম। এখন অর্ধেক আসার পর জানছি লকডাউন। যার কারণে এখন সাজা পাইতেছি।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালি জেলায়। সেখান থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত ভেঙ্গে ভেঙ্গে আসতে হয়েছে। গাড়ী ভাড়ার কথা নাই বলি, ৫০ টাকার ভাড়া নিতাছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। আবার ৩০ টাকার ভাড়া দুইশত টাকা দিয়ে রিকশায় করে গাজীপুরের মৌচাকে যেতে হচ্ছে।

বিভিন্ন জায়গা থেকে আব্দুল্লাহপুরে আগত যাত্রীরা নিজ নিজ গন্তব্যে যাওয়ার উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে সিএনজি, রিকশা, অটোরিকশায় করে রওনা হোন। এসময়ও ওইসব যাত্রীদের গুনতে হয়েছে দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ পর্যন্ত ভাড়া।

আব্দুল্লাহপুরে আগত ঢাকা টু শেরপুর রোডের গোল্ডেন লাইন পরিবহনের ঢাকা মেট্রো ব-১৪-৪৪০৭ নম্বর বাসের চালক আনসার আলী বলেন, পেটের দায়ে ঢাকায় আসছিলাম। এসে গাড়ীতে কাজ করাইছি। এখন চৌরাস্তা যাবো। 

একই সড়কের ড্রীমল্যান্ড স্পেশাল সার্ভিস পরিবহণের ঢাকা মেট্রো ব- ১৩-১৭৮৭ নম্বর বাসের হেলপার বলেন, আমারা সবাই বাসের ড্রাইভার হেলপার। এখানে কোন যাত্রী নাই। আমাদেরকে আরো চার জায়গায় আটক আটক করেছে। আমাদের সব কাগজপত্র চেক করে ছেড়ে দিয়েছে। এখান থেকে যদি ঘুরিয়ে দেওয়া হয় তাহলে আমরা এখন থাকবো কোথায়, খাবো কি। 

অপরদিকে একই বাসের ড্রাইভার আলম বলেন, আগের লকডাউনে গাড়ী বন্ধ থাকায় চরম দুর্দশায় জীবন পার করতে হয়েছে। এখনো আমার বাড়ির তিন মাসের ভাড়া বাকি আছে। পকেটে টাকা পয়সা  নাই। আমাদের প্রত্যেকের কাছে শ্রমিক কার্ড আছে। মহাখালী থেকে এই পর্যন্ত সব জায়গাতেই সার্চ করে ছেড়েছে। আমরা সবাই পরিবহণ শ্রমিক। গাড়ীতে কোন যাত্রী নেই। 

অপরদিকে আব্দুল্লাহপুরের বাস কাউন্টার মাস্টাররা বলেন- লকডাউন চাই না, ভাত চাই। আমাদের ভাত দেন, ভাত খাই। লকডাউনে বাস বন্ধ থাকলে কাউন্টার বন্ধ থাকবে। আর আমরা না খেয়ে মরবো। তাই বাঁচার জন্য ভাত চাই। 

খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, হটাৎ করেই লকডাউন ঘোষণা হওয়ার কারণে বিকেল থেকে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত আব্দুল্লাহপুরে যাত্রীদের উপচে পড়া ভীড় ছিল। তারা যে যেভাবে পেরেছেন, সেইভাবেই গন্তব্যস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। তবে রাত ভাড়ার সাথে সাথেই যাত্রীদের ভীড় অনেক কমে যায়।

ঢাকা টু ময়মনসিংহ মহাসড়কের আব্দুল্লাহপুর বাহির পথে কর্তব্যরত উত্তরা পশ্চিম থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাইফুল বলেন, সিনিয়র অফিসাররা নির্দেশনা দিয়েছেন- বাহিরের জেলার কোন গাড়ী ঢাকায় ঢুকবে না। সেই সাথে দূর পাল্লার কোন যাত্রীবাহী গাড়ি ঢাকা থেকে বাহিরে যাবে না। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী রাজধানীতে একটা গাড়ী ইনও করে নাই, আবার একটা গাড়ী রাজধানী থেকেও যাইতেও পারে নাই।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যদি কোন গাড়ী সিগন্যাল অমান্য করে চলেও যায়, তাহলে সামনের কামড়পাড়া ও ধউর চেকপোস্টে আটকিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

অপরদিকে ঢাকার প্রবেশপথে কর্তব্যরত উত্তরা পূর্ব থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. বেলাল হোসেন বলেন, যেসব আন্তঃজেলা বাস বিভিন্ন জেলা থেকে ছেড়ে এসেছে, ওই সব বাসগুলো টঙ্গীর স্টেশন রোডেই আটকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাই আব্দুল্লাহপুর দিকে কোন বাস প্রবেশ করতে পারেনি। যেসব প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও হাইস আসছে, সবগুলোকে জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। যাদের জরুরী প্রয়োজনে বা জরুরী কাজে নিয়োজিত তাদের গাড়ীর নাম্বার লিখে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। বাকিদের ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

অপরদিকে আব্দুল্লাহপুরে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্ট জহিরুল ইসলাম বলেন, এক চেকপোস্ট সিগন্যাল অমান্য করে কোন গাড়ী চলে যাওয়ার চেষ্টা করলে তা সামনের চেকপোস্টে আটকিয়ে দেওয়া হয়। যেসব গাড়ী সিগন্যাল অমান্য করে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে সেসব গাড়ীগুলোকে রেকারিং করা হচ্ছে।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo