• অর্থনীতি

চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার জমছে না কানসাট আমের বাজার

  • অর্থনীতি
  • ২২ জুন, ২০২১ ১৭:৫৭:০৭

ছবিঃ সংগৃহীত

নিউজ ডেস্কঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রধান অর্থকরী ফল আম। আমকে ঘিরেই আবর্তিত হয় এ জেলার অর্থনীতির চাকা। এ বছর রেকর্ড ছাড়িয়েছে আমের উৎপাদন। চলতি বছর জেলায় প্রায় আড়াই লাখ মেট্রিকটন আম উত্পাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। তবে বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের বাজার জমছে না।

আমের বাজার লকডাউন আর বিধিনিষেধের বাইরে থাকলেও ক্রেতার অভাবে আম অর্থনীতিতে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পর্যাপ্ত ক্রেতা না থাকায় গাছেই পাকছে আম। প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ পাকা আম ঝরে পড়ছে। অন্যদিকে আমের দরপতনে হতাশ আমচাষিরা। করোনা মহামারির কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ব্যবসায়ীদের ৫০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হবে বলে জানিয়েছেন আম ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ম্যাংগো প্রডিউসার মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন।

আমচাষিদের অভিযোগ, চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় আমের ভরা মৌসুমে ১৪ দিনের লকডাউন শেষে এখনো বিধিনিষেধ চলমান। ফলে বাইরের ক্রেতারা হাটবাজারে আসতে পারেননি। এ সুযোগে স্থানীয় আড়তদাররা আমবাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। যারা অন্যান্য বছর বাইরের ব্যবসায়ীদের কমিশনে আম কিনে দিতেন, তারাই এখন চাষিদের কাছে কম দামে আম কিনে বেশি দামে বাইরের ক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করছেন। বাইরের ক্রেতা না আসায় অনেক আমচাষি স্থানীয় আড়তদারের কাছে আম বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

সরজমিনে আমচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছরের চেয়ে প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে আম। গত বছর খিরসাপাত বাজারে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকায় প্রতি মণ আম বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এ বছর একই আম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকায়। গত বছর ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায় ল্যাংড়া আম বিক্রি হলেও এবার বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা মণ দরে। অন্যদিকে ক্রেতা না থাকায় ভোলাহাটে ৫৫ কেজিতে মণ হিসেবেও আম বিক্রি হচ্ছে।

স্থানীয় আমচাষি বাদশা বলেন, করোনার কারণে ক্রেতার সমাগম কম। ফলে আমের দাম গত বছরের তুলনায় অনেক কম। খরার কারণে এ বছর আমের উত্পাদন খরচও বেশি হয়েছে। প্রতি বছর আমরা বাগান থেকে আম বিক্রি করে দেই। কিন্তু এ বছর ক্রেতাদের দেখা মিলছে না। ফলে স্থানীয় আড়তদাররা এক রকম বাধ্য করে কম দামে আম কিনছেন। আমরাও বাধ্য হয়ে আড়তে বিক্রি করছি। ম্যাংগো ফাউন্ডেশনের সদস্যসচিব আহসান হাবিব জানান, এ বছর আমের ফলন ভালো হওয়ায় দাম কিছুটা কম। চাষিদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের জন্য বৈদেশিক বাজার সৃষ্টির বিকল্প নেই। এ জন্য আম রপ্তানি ব্যয় ও প্রক্রিয়া সহজ করতে সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন।

বাংলাদেশ ম্যাংগো প্রডিউসার মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, আমের দাম কম হওয়ায় এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের ব্যবসায়ীদের ৫০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে দেড় হাজার কোটি টাকার আম উত্পাদন হলেও ৯০০-১০০০ কোটি টাকা আসতে পারে। করোনার কারণে লকডাউন ও চলমান বিধিনিষেধের ফলে অনেক ক্রেতা এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে আসতে পারেননি। উত্পাদিত আম বাজারজাতের জন্য একটি স্থায়ী সমাধান দরকার।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, এ বছর রেকর্ড পরিমাণ আমের উত্পাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছর আমের উত্পাদন হয়েছিল ২ লাখ ৮ হাজার মেট্রিক টন। এ বছর ৩৪ হাজার ৭৩৮ হেক্টর জমিতে আম উত্পাদন আড়াই লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে। বাজারমূল্য অনুযায়ী এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের উৎপাদন হবে দেড় হাজার কোটি টাকা।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo