• অপরাধ ও দুর্নীতি

পরিমনিকে ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টাঃ উঠতি বয়সের মেয়েদের নিয়ে ডিজে পার্টি করতো নাসির

  • অপরাধ ও দুর্নীতি
  • ১৪ জুন, ২০২১ ১৯:০২:২৭

ছবিঃ সিএনআই

নুরুল আমিন হাসান : বাংলা সিনেমার চিত্রনায়িকা পরিমনিকে ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগে রাজধানীর উত্তরা থেকে তিন জন রক্ষিতা ও এক সহযোগীসহ ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ (৫০)কে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতারকৃত অন্যান্যরা হলেন, মামলার দুই নম্বর আসামী তুহিন সিদ্দিকী অমি (৪১), স্নিগ্ধা, সুমি ও লিপি।

উত্তরা ১ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর সড়কের ১৩ নম্বর ভবন থেকে সোমবার (১৪ জুন) বিকেলে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ইয়াবা, মদ-বিয়ার জব্দ করা হয়। পরবর্তীতে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। 

এর আগে ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগ এনে সাভার মডেল থানায় নাসির ও অমিসহ আরো চারজনকে অজ্ঞাত আসামী করে একটি মামলা করেন পরিমনি।

জানা যায়, গ্রেফতার হওয়া ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য। এছাড়াও তিনি নাসির কুঞ্জ ডেভেলপারসের চেয়ারম্যান ও উত্তরা ক্লাবের সাবেক সভাপতি।

গ্রেফতারের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, এটা পরীমণির কস্টিউম ডিজাইনার অমির বাসা। পরীমণির সংবাদ সম্মেলনের পর থেকে নাসির তার তার তিন জন রক্ষীতাকে নিয়ে এই বাসায় নাসির পালিয়ে ছিলেন। মাদক রাখার অভিযোগে সেই তিন জনকেও আমরা গ্রেফতার করেছি। তিন নারী ছাড়াও অমিকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, গ্রেফতার হওয়া নাসির উঠতি বয়সের মেয়েদের নিয়ে ডিজে পার্টি করতো। এছাড়াও সে একজন মাদক ব্যবসায়ী। 

নাসির প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, নাসিরের বিরুদ্ধে আগে মাদক ও নারী নির্যাতনের মামলা হয়েছে। নানা অভিযোগে তাকে উত্তরা ক্লাব থেকে বহিস্কারও করা হয়েছে বলে জেনেছি। কেউ তার অভিযোগ করে আমরা সেগুলোর তদন্ত করবো।

নাসিরকে হত্যাচেষ্টা ও ধর্ষণচেষ্টার মামলায় সাভার থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তবে বর্তমানে মাদক উদ্ধারের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হবে। এছাড়াও মাদক উদ্ধারের ঘটনায় একটি মামলা করা হবে।

হারুন অর রশিদ বলেন, ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টার ঘটনায় রোববার (১৩ জুন) এয়াতে নায়িকা পরিমনি সংবাদ সম্মেলন করার পরই আমরা গ্রেফতারের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু রাতে মামলা না হওয়ায় আমরা এ্যাকশনে যাই নি। সাভার মডেল থানায় মামলার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে আমরা অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করেছি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'সে (পরীমণি) স্বনামধন্য নায়িকা। সে ওখানে (বোট ক্লাব) যেতেই পারে। সে গেলে যে তাকে ওখানে হ্যারেজ (হয়রানি) করবে সেটা ঠিক না। আসলে কী ঘটেছে তা বিস্তারিত তদন্ত করে বলতে পারবো।’

এর আগে উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের গরীব ই নেওয়াজ রোডের ২০ নম্বর বাসার অষ্টম তলা থেকে সোমবার (১৪ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিন জনকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ওই বাসাটি ছিল আরএস কুঞ্জ ডেভেলপার্স নামের একটি কোম্পানি।

ডিবি পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গ্রেফতার হওয়া তিনজন হলেন, ইঞ্জিনিয়ার ইমতিয়াজ, ইঞ্জিনিয়ার শাকিব ও অফিস সহকারী বিধান। গ্রেফতারকালে ওই অফিসের সিসি ক্যামেরা ও কম্পিটারের হার্ডডিক্স জব্দ করা হয়েছে। 

 

তাদেরকে আটক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিবি জানায়, নায়িকা পরিমনির ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদেরকে আটক করা হয়েছে। তাদেরকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

 

খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়,  গ্রেফতার হওয়া নাসির উদ্দিন মাহমুদ ঢাকা বোট ক্লাবের সদস্য। তিনি ৩৭ বছর ধরে ডেভেলপার ব্যবসায়ে আছেন। ১০ বছর ধরে মাহমুদ আরএয়া কুঞ্জ ডেভেলপার্স লিমিটেডের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন। কুঞ্জ ডেভেলপার্সের আগে তিনি মাহমুদ বিল্ডার্স অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশনের এমডি ছিলেন।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সয়েল, ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগ থেকে পড়াশোনা করেন। তিনি ও তার প্রতিষ্ঠান সরকারের গণপূর্ত অধিদফতর, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি), শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর (ইইডি), রাজউক, রেলওয়েসহ সরকারি-বেসরকারি নানা ঠিকাদারি কাজ করেন।

নাসির ইউ মাহমুদ বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রির (বিএসিআই) সাবেক নির্বাহী পরিষদের সদস্য। তিনি  ২০১৫, ২০১৬ এবং ২০১৭ সালের উত্তরা ক্লাবের নির্বাচিত সভাপতি, লায়ন ক্লাবের ঢাকা জোনের চেয়ারম্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। 

এছাড়াও তিনি জাতীয় পার্টির (জাপা) একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য। ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর জাপার ৯ম কাউন্সিলে তাকে প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হয়। 

এদিকে সাভার মডেল থানার পরিদর্শক কাজী মাঈনুল ইসলাম বলেন,  ৯ জুন (বুধবারে) রাতে ঢাকা বোট ক্লাবে পরীমণিকে ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগ এনে নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও অমিসহ অজ্ঞাত আরো চারজনকে আসামী করে একটি মামলা করেছেন নায়িকা পরিমনি। সোমবার সকালে রূপনগর থানার মাধ্যমে লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। তার করা মামলা নম্বর-৩৮।

মামলার অভিযোগে পরিমনি উল্লেখ করেন, বুধবার রাত পৌনে ১১টার দিকে তার এক বন্ধু (অমি) বাসায় আসেন। বাসা থেকে তাকে উত্তরার বোট ক্লাবে (ঢাকা বোট ক্লাব) নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন জিমি (ব্যক্তিগত রূপ সজ্জাশিল্পী)। বোট ক্লাবে যাওয়ার পর সেখানে সাত/আটজনের একটা গ্রুপ ছিল। তাদের মুরব্বি ছিলেন নাসির উদ্দিন (নাসির ইউ মাহমুদ)। তিনি বোর্ড ক্লাবের চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচয় দেন।

‘নাসির উদ্দিনসহ (নাসির ইউ মাহমুদ, প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী) উপস্থিত সাত/আটজন তাকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করতে থাকে। নায়িকাকে জোর করে নেশাজাতীয় কিছু খাইয়ে অজ্ঞান করার চেষ্টা করা হয়। পরে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়। এতে জিমি বাধা দিলে তাকে মারধর করা হয়। অশ্লীল নানা কথাবার্তা বলা হয়। মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয় বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo