• অপরাধ ও দুর্নীতি

গার্লফ্রেন্ড ও অর্থ নিয়ে দ্বন্ধ, হত্যা মামলার পলাতক আসামীর নেতৃত্বে আরেক খুন

  • অপরাধ ও দুর্নীতি
  • ১১ মে, ২০২১ ১৬:১৯:০৩

ছবিঃ সিএনআই

নুরুল আমিন হাসান: রাজধানীর উত্তরায় গার্লফ্রেন্ড ও অর্থ নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে দক্ষিণখানের কিশোরগ্যাং লিডার আরিফিন শাকিলকে (২৩) ইফতারের দাওয়াত দিয়ে ঢেকে নিয়ে গিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। উত্তরা পূর্ব থানার মঙ্গলবার (১১ মে) উত্তরা পূর্ব থানার একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানিয়েছে ।  

এর আগে উত্তরার আব্দুল্লাহপুরের আইচি হাসপাতালের পিছনে রোববার (৯ মে) রাত ৯টা থেকে সোয়া ৯টার দিকে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। নিহত ওই কিশোর গ্যাং লিডার হলেন দক্ষিণখানের গোয়ালটেক এলাকার তাইজুল ইসলাম ও শাহনাজ বেগম দম্পতির ছেলে বলে জানিয়েছে পুলিশ। 

উত্তরা পূর্ব থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহমুদুল হাসান সিএনআই'কে বলেন, উত্তরখান মেডিকেল রোডের ভূঁইয়া সাব্বির ও দক্ষিণখানের গোয়ালটেকের আরিফিন শাকিল দুজন দুজনার পূর্ব পরিচিত। তারা পরস্পর বন্ধু। উভয়ে কিশোরগ্যাং গ্রুপের সক্রিয় সদস্য এবং গ্যাং লিডার। তাদের বিরুদ্ধে উত্তরার বিভিন্ন থানায় হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। উভয়েই একাধিকবার জেলও খেটেছে। নিহত শাকিল ডান্স করতো, তাই তার নাম ড্যান্সার শাকিল বলেই বেশিই পরিচিত। 

তিনি বলেন, ড্যান্সার শাকিলের গার্লফ্রেন্ড কল্পনা ওরফে আল্পনা। তার সাথে দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক কল্পনার। অপরদিকে সাব্বিরের সাথে দুই-তিন দিন দেখা হয়েছে কল্পনার। তখন সাব্বির কল্পনাকে বলেছে, শাকিল থাকতে তোমার সাথে কখনোই থাকতে পারবো না। এ নিয়ে সাব্বির ও শাকিলের মধ্যে দ্বন্ধ ছিল বলে কল্পনা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।

মাহমুদুল সিএনআই'কে বলেন, গত দুই দিন পূর্বে শনিবার শাকিল ও সাব্বিরের সাথে ঝগড়াবিবাদ ও হাতাহাতি হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, গার্লফ্রেন্ডকে কেন্দ্র করেই এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও তাদের মধ্যে গ্রুপিং নিয়েও এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। 

হত্যাকান্ডের ধরণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের ওই সময় আইচি হাসপাতালের পিছনে সাগর, জুবায়ের, সাব্বির, কল্পনাসহ অনেকেই উপস্থিত ছিল। পরে যুবায়ের সাগর ও কল্পনাকে আলাদাভাবে সরিয়ে নেয়। পরে সাব্বির ও তার ৫/৬ জন সহযোগীরা শাকিলকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

এক প্রশ্নের জবাবে এসআই মাহমুদুল হাসান বলেন, এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

অপরদিকে দক্ষিণখান থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আফতাব উদ্দিন সিএনআই'কে বলেন, দক্ষিণখানের কিশোর গ্যাং লিডার শাকিল ও তার সাথে থাকা এক মেয়েকে ইফতারির দাওয়াত দিয়ে নিয়ে আসে উত্তরখানের কিশোর গ্যাং লিডার ভূঁইয়া সাব্বির। ইফতারের পর রাত ৯টার দিকে সাব্বির ও তার সাথে থাকা ২/৩ জন ছুরি চাপাতি দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপায়। পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে উত্তরার আইচি হাসপাতালে নিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

দক্ষিনখান থানা পুলিশের বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, এ হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা সাব্বিরের বিরুদ্ধে উত্তরখান থানায় মাদক হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। অপরদিকে নিহত শাকিল, তার ভাই সানি, তার বাবা তাজুল ইসলাম ও মা শাহনাজ পেশাদার মাদক চোরাকারবারী। শাকিলসহ তার ভাই সানির বিরুদ্ধে দক্ষিনখান থানায় কিশোর গ্যাং কালচার এবং মাদক চোরাকারবারির অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে। এসব মামলায় শাকিল ও সানি একাধিকবার জেল হাজত বাস করেছেন।

এছাড়াও উত্তরায় কর্তব্যরত বিভিন্ন পুলিশ কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, উত্তরার স্কুল ছাত্র আদনান হত্যা মামলা এবং উত্তরখানের কলেজ ছাত্র সোহাগ হত্যা মামলার আসামী ছিল সাব্বির। আদনান হত্যা মামলা জেলও খেটেছিল সে। তবে সোহাগ হত্যা মামলা তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। পলাতক থেকেও এবার আরেকটি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে সাব্বির। 

উত্তরখান থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কিশোরগ্যাং লিডার সাব্বির অত্যন্ত চতুর প্রকৃতির। তাই তাকে সহজে ধরতে পারে না পুলিশ। সে এলাকায় ঘুরাফেরা করলেও এক জায়গায় বেশি সময় অবস্থান করে না। সেই সাথে রাতেও বাসায় থাকে না সাব্বির।

আইচি হাসপালের সিকিউরিটি গার্ড হাসান সিএনআইকে বলেন, সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ চেক সময় হাসপাতালের সব স্টাফকে বাহিরে রাখে পুলিশ। প্রস্টেট চেক করাকালে পুলিশের কর্মকর্তারা বলতে থাকেন, 'স্যার দেখেন দেখেন কিভাবে শাকিলকে কুপিয়ে হত্যা করছে ওরা'। পরে পুলিশ সিসি ক্যামেরার ডিভিআর খুলে নিয়ে যায়।

এদিকে নিহতের ভাই সাকিব হাসান সানি সিএনআই'কে বলেন- ভূঁইয়া সাব্বির, আরমান ওরফে একন, দুধ শামিম ও মৃদুল শিকদার আইচি হাসপালের সামনে ইফতারের আয়োজন করে। পরে শাকিলকে দাওয়াত করে সাব্বির। কিন্তু শাকিলের আরেক জায়গায় দাওয়াত থাকায় সে ইফতারের যেতে পারে নি। পরে ফুসকা খাওয়ানোর কথা বলে ডেকে নিয়ে যায় ওরা। 

তিনি বলেন, ওই সময় শাকিলের সাথে তার বান্ধবী কল্পনা, জুয়াবের, নয়ন, সাগরসহ কয়েকজন গিয়েছিল। পরে শাকিলকে হাসপালের পিছনের অন্ধকার গলিতে ঢেকে নিয়ে সাব্বির ও তার সহযোগীরা কুপিয়ে খুন করে।

অপরদিকে নিহত শাকিলের মা শাহনাজ বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে সিএনআই'কে বলেন, 'আমার পোলাডারে ওরা দাওয়াত দিয়া মাইরালাইলো গো। আমি ওদের ফাঁসি চাই।'

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo