• আন্তর্জাতিক

করোনা মোকাবিলায় ভারতকে সর্বাত্মক লকডাউনের পরামর্শ দিলেন ড. ফাউসি

  • আন্তর্জাতিক
  • ০১ মে, ২০২১ ১৬:৪৬:২৪

ছবিঃ সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর থেকে সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছে ভারত। প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যায় হচ্ছে রেকর্ড। মহামারি মোকাবিলায় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার যেন বেসামাল। এই পরিস্থিতিতে মহামারি নিয়ন্ত্রণে পুরো ভারতে সর্বাত্মক লকডাউনের পরামর্শ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ মহামারি বিশেষজ্ঞ ড. অ্যান্থনি ফাউসি।

তিনি বলেছেন, করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ও মৃত্যুর ব্যাপক এই সংখ্যা কমিয়ে আনতে হলে টানা কয়েক সপ্তাহের জন্য ভারতে পুরোপুরি লকডাউন কার্যকর করতে হবে। তার মতে, কোনো দেশই লকডাউন করতে চায় না। কিন্তু এখন ভারতের যা পরিস্থিতি, তাতে অন্তত কয়েক সপ্তাহের জন্য গোটা ভারতে লকডাউন হওয়া দরকার। তাহলেই সংক্রমণ কমিয়ে আনা সম্ভব।

শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ড. অ্যান্থনি ফাউসি একথা বলেন। মহামারি বিশেষজ্ঞ হিসেবে তার খ্যাতি রয়েছে বিশ্বজুড়ে। এখন পর্যন্ত ৭ জন মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। বর্তমানে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শীর্ষ মেডিকেল উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন।

ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকার আপনাকে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব দিলে মহামারি নিয়ন্ত্রণে আপনি প্রথমেই কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করতেন- এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ফাউসি বলেন, ভারত কী করছে আমি সেটা করব কি না, সে বিষয়ে কথা বলে কোনও সমালোচনায় জড়াতে চাই না। আমি জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, রাজনীতিক নই।

আমার এটাই মনে হয়েছে যে, এই মুহূর্তে ভারত একটি অত্যন্ত কঠিন অবস্থার মধ্যে রয়েছে। একটি সংবাদমাধ্যমে দেখছিলাম, লোকেরা রাস্তায় নেমে অক্সিজেন খুঁজছে। এই লড়াই কঠিন।

সরকারের কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম না করে তিনি বলেন, ভারতে করোনার বিরুদ্ধে বিজয় ঘোষণা করাটা ছিল অকালপক্ক সিদ্ধান্ত। এটাকে আগে স্বীকৃতি দিতে হবে।

এই পরিস্থিতিতে তার পরামর্শ কী- এমন প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, ভারতে এখন যা অবস্থা সেখানে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে। টিকা প্রয়োগের কাজ চলছে। অক্সিজেনের প্রয়োজন, রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করা প্রয়োজন; যদিও সেখানে শয্যা সংকট রয়েছে। আর যারা টিকা নিচ্ছেন, তাদেরও দুই সপ্তাহ সময় দিতে হবে রোগ প্রতিরোধের জন্য।

তিনি বলেন, অক্সিজেন সংকট মোকাবিলার জন্য কমিশন বা ইমারজেন্সি রেসপন্স টিম তৈরি করা প্রয়োজন।

করোনা মোকাবিলায় চীনের কর্মকাণ্ডকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রথম যখন করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে, সেসময় দ্রুততার সঙ্গে হাসপাতালে জরুরি ইউনিট তৈরি থেকে স্বাস্থ্য অবকাঠামো জোরদার করার কাজ করেছিল বেইজিং। যা অবাক করে দেওয়ার মতো। এরপর সামরিক বাহিনীর ভূমিকা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। জরুরি ভিত্তিতে তারাই সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

তার মতে, এখন যে কাজই করতে হবে তা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি বিবেচনায় করতে হবে। হাতে সময় খুব কম। শত্রুপক্ষ (করোনাভাইরাস) হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই এখন জরুরি অবস্থা মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। যত বেশি মানুষ টিকা নেবে, সুস্থতার হার তত বাড়বে।

ড. ফাউসি বলেন, এই ভাইরাস কী করতে পারে সেটা আসলে নিজেদেরই উপলব্ধি করতে হবে। মার্কিন নাগরিক হিসেবে দেখেছি, করোনাভাইরাসের আঘাতে আমার দেশ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র ধনী দেশ হতে পারে, কিন্তু ভাইরাস তো আর ধনী-গরিব মানে না। আমাদের ভালো প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও করোনার আঘাত ছিল ভয়ংকর। তাই ভাইরাসের বিষয়ে সতর্কতার দিকটি কেউ অবহেলা করলে তাকে সমস্যায় পড়তেই হবে। করোনার বিরুদ্ধে জয়লাভ করেছি এটা চিন্তা করা অবান্তর।

টিকা দেওয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে তিনি বলেন, ১৪১ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারত। এতো বিপুল সংখ্যক মানুষকে সুরক্ষিত রাখতে অনেক অনেক টিকার প্রয়োজন। তাই টিকার সরবরাহ আরও বৃদ্ধি করা উচিত।

প্রয়োজনে চীন ও রাশিয়ার টিকাও ভারতের নেওয়া উচিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমি যতদূর জানি- এখন পর্যন্ত ভারত মোট জনসংখ্যার মাত্র ২ শতাংশ টিকার ডোজ সম্পূর্ণ করতে পেরেছে। এখনও অনেক কাজ বাকি। দেশের মানুষকে নিরাপদ রাখতে অন্য সব চিন্তা আপাতত দূরে সরিয়ে রাখা ভালো। যেকোন ভাবে ভ্যাকসিন জোগাড় করাই হোক ভারতের প্রাথমিক লক্ষ্য।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo