• বিশেষ প্রতিবেদন

রামগড়ে তরমুজের বাজারে আগুন! 

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ২৭ এপ্রিল, ২০২১ ১০:২৭:৩৭

ছবিঃ সংগৃহীত

রামগড় প্রতিনিধি: হঠাৎ করেই খাগড়াছড়ির রামগড়ে তরমুজের দাম বেড়ে গেছে! মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি তরমুজের দাম  বেড়েছে দ্বিগুন। গত সপ্তাহে যেই তরমুজ বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ২০০ টাকা সে তরমুজ এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা ধরে।  তাপমাত্রা যেমন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তেমনি বাড়ছে তরমুজের দাম।

প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। তাপদাহ থেকে সামান্য পরিত্রাণ পেতে ইফতারে ধর্মপ্রাণ রোজাদাররা তরমুজই পছন্দ করেন। কিন্তু আকাশ ছোঁয়া দামের কারণে এখন আর তরমুজের স্বাদ নিতে পারছেন না নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষেররা। এরইমধ্যে করোনায় লকঢাউনে তরমুজের দাম সাধারণ ক্রেতাদের হাতের নাগালের বাইরে চলে গেছে।

অভিযোগ উঠেছে প্রশাসনের যথাযথ মনিটরিং না থাকায়  সিন্ডিকেট করে খাগড়াছড়ি লাইনে  তরমুজ ব্যবসায়ীরা মনমতো তরমুজের দাম বাড়িয়েছেন। প্রচুর সরবরাহ থাকলেও সংকট ও পরিবহন সমস্যার  কথা বলে তরমুজের দাম বেশি নিচ্ছেন। অথচ কাঁচা মাল বা পণ্যবাহী মালামালা পরিবহনে সরকারী কোন বিধি নিষেধ না থাকলেও ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট দেখাচ্ছেন।

সাধারণত রোজার সময় ফলের কদর বাড়ে। ফল ছাড়া ইফতার যেন কল্পনাই করা যায় না। এদিকে গ্রীষ্মকাল শুরু হলেও পরিপক্ব না হওয়ায় বাজারে এখনও আসেনি চাহিদা অনুযায়ী মৌসুমী ফল। তাই বাজারে থাকা গ্রীষ্মকালীন ফল তরমুজের ওপরই এখন ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি। এরমধ্যে একয়দিনের টানা তাপদাহে অতিষ্ট হয়ে মানুষ তরমুজ ফলের দিকে ঝুকলেও কেনার সাধ্য নেই।

আর এ সুযোগটিকে কাজে লাগাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তারা তরমুজের দাম হাঁকাচ্ছেন ইচ্ছেমতো। এই মধ্য এপ্রিলের শুরুতে যে তরমুজের ১০০ থেকে ২০০ টাকা ছিলো এপ্রিলের শেষ দিকে সে তরমুজ এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৫০ কিংবা ৫০০ টাকারও বেশি দামে। ফলে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে রমজানে দাম সহনশীল রাখার ঘোষণা দেওয়া হলেও রোজা শুরুর পর সেই প্রতিশ্রুতি মুখ থুবড়ে পড়েছে।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে নানান অজুহাত দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এ বছর তরমুজের ফলন ভালো হয়নি। এর ওপর চৈত্রের শুরুতেই প্রচণ্ড গরম পড়তে শুরু করায় বেশি দাম পাওয়ার আশায় পরিপক্ক হওয়ার আগেই মাঠ থেকে তরমুজ তুলে বিক্রি করেছেন কৃষকরা। তারা বলছেন, এখন আর মাঠে তরমুজ নেই। তাই বাজারে তরমুজের সরবরাহ কমেছে। আর তাই দামও বেড়েছে। আর ‘লকডাউনের’ কারণে দেশের বেশির ভাগ তরমুজ উৎপাদন হওয়া বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে তরমুজ আসতে পারছে না। এজন্য দাম বেশি।

রামগড় ও সোনাইপুল  বাজারে বেশ কয়েকটি খুচরা বিক্রেতা মুল সড়কের পাশে তরমুজ বিক্রি করছেন।  সেখানে তরমুজ কিনতে আসা শাহ আলম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কয়েক বছর আগেও একটি ছোট আকারের তরমুজের (গড় ওজন ৪ কেজি পর্যন্ত) দাম ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, মাঝারি আকারের তরমুজ (গড় ওজন ৫ কেজি থেকে ১০ কেজি) ৮০ থেকে ১৮০ টাকা এবং বড় আকৃতির তরমুজ (১০ কেজি থেকে তারও বেশি ওজনের) ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতো। তবে ইদানিং দাম বেড়ে যাওয়ায় একটি ছোট সাইজের তরমুজেরই দাম পড়ছে ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা। আর একটা বড় আকারের তরমুজ সাড়ে ৫শ' থেকে ৬শ' টাকা! অনেক ক্ষেত্রে তারও বেশি। তাহলে এত দাম দিয়ে ক'জন মানুষ আর এই গরমে রসালো তরমুজে গলা ভেজাতে পারবেন? প্রশ্ন রাখেন তিনি।

এদিকে, বাজার ঘুরে দেখা গেছে- সব ধরনের তরমুজের দামই আকাশ চুম্বি। প্রতিটি মাঝারি আকারের তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকায়। আকার একটু বড় হলেই তা ৫/৬শ’ টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। 

সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিভিন্ন অঝুহাতে রামগড় বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান,  তাদের কোনো সিন্ডিকেট নেই। এবারে মার্চে ফেনী নোয়াখালীর তরমুজ শেষ ফলে ভোলা, পটুয়াখালী সহ দুরদূরান্ত  থেকে তরমুজ আসছে। বর্তমানে তরমুজ প্রায় শেষের দিকে। এজন্য সরবরাহ কম।  তার ওপর ‘লকডাউনের’ কারণে বরিশাল ও খুলনা থেকে তরমুজ আসতে পারছে না। এখানে তাদের করার কিছু নেই বলেও উল্লেখ করেন এ ব্যবসায়ী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রামগড় উপজেলা নির্বাহী অফিসার  মু. মাহমুদ উল্লাহ মারুফ জানান, এ বিষয়ে তিনি অবগত ছিলেন না। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা থেকে খোঁজ নিয়ে খুব শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করবেন।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo