• সমগ্র বাংলা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের তান্ডবে ৪৫ মামলায় আসামী ৩০ হাজার, গ্রেপ্তার ৩২ জন

  • সমগ্র বাংলা
  • ০৮ এপ্রিল, ২০২১ ১২:২১:০৬

ছবিঃ সিএনআই

ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে হাসান জাবেদঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের তান্ডবের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ৪৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র সদর মডেল থানাতেই ৪০টি মামলা দায়ের করা হয়। এছাড়া আশুগঞ্জ থানায় ২টি, সরাইল থানায় ২টি ও আখাউড়া রেলওয়ে থানায় ১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার সদর থানায় ৬টি মামলা দায়ের করা হয়। মোট ৪৫টি মামলায় ৩০ হাজারেরও বেশি লোককে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত ৩২ জনের মধ্যে হেফাজতে ইসলামের কোনো নেতাকর্মী নেই।

গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হচ্ছে হরতালের দিন বঙ্গবন্ধুর মু্যরাল ভাঙচুরকারী আরমান আলিফ-(২২)। গত ৪ এপ্রিল রাতে সদর উপজেলার বিশ্বরোড এলাকা থেকের্ যাব-১৪ এর একটি দল তাকে গ্রেপ্তার করে। পরের্ যাব সদস্যরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার কাজীপাড়ায় আরমান আলিফের ভাড়া বাসায় তলস্নাশি চালিয়ে বঙ্গবন্ধুর মু্যরাল ভাঙার কাজে ব্যবহৃত একটি শাবল, একটি বিদেশি পিস্তল, ২টি ম্যাগাজিন এবং ৪ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে। এর আগে মু্যরাল ভাঙচুরের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়।

গ্রেপ্তারকৃত আরমান আলিফ জেলার নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের ফুলকারকান্দি গ্রামের শুক্কুর মিয়ার ছেলে। বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার কাজীপাড়ায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে সে। 

পুলিশ জানায়, তান্ডবের সময় ভিডিও ফুটেজ ও স্থির ছবি দেখে হামলাকারীদের শনাক্ত করা হচ্ছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনকে শনাক্ত করে তাদেরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। হেফাজত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পুলিশ ও মামলার নথিপত্র সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঘটে যাওয়া তান্ডবে ৪৫টি মামলার মধ্যে সদর থানায় ৪০টি, আশুগঞ্জ থানায় দুটি, সরাইল থানায় দুটি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আখাউড়া রেলওয়ে থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। ৪৫টির মধ্যে ছয়টি মামলায় ১৩৭ জনের নাম উলেস্নখ করা হয়। বাকি ৩৯টি মামলায় সবাই 'অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারী'। কোনো কোনো মামলায় 'অজ্ঞাতনামা কওমি মাদ্রাসাছাত্র-শিক্ষক ও তাদের অনুসারী দুষ্কৃতকারীদের' কথা উলেস্নখ করা হয়। তবে কোনো মামলাতেই হেফাজতের কোনো নেতাকর্মীর নাম নেই।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় 'সরকারবিরোধী' আন্দোলনে এবারই প্রথম হিন্দুদের মন্দিরে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। বেছে বেছে পুড়িয়ে দেওয়া হয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বাড়ি।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আহ্বায়ক আবদুন নূর একের পর এক ঘটনার জন্য বিচারহীনতার সাংস্কৃতিকে দায়ী করেছেন। তিনি মনে করেন, আগের ঘটনাগুলোর বিচার হলে একই শক্তি আবারও এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে সাহস পেত না।

সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গনের সাধারণ সম্পাদক মনজুরুল আলম বলেন, '২০১৬ সালের ১২ জানুয়ারিও এখানে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল। সে ঘটনার বিচারও হয়নি। ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর পাকিস্তান আমলে মৌলবাদ সরকার ক্ষমতায় থাকলেও দেশ স্বাধীনের আগে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। এবারের ধ্বংসযজ্ঞে গান পাউডার ব্যবহার করা হয়েছে। এসব থেকে বুঝা যায় এটা পরিকল্পিত হামলা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাহিত্য একাডেমির সভাপতি কবি জয়দুল হোসেন বলেন, '৭১ এর মতো বর্বরোচিত তান্ডব চালানো হয়েছে। বেছে বেছে সরকারি অফিসের পাশাপাশি সংস্কৃতি অঙ্গনে হামলা চালানো হয়। এ হামলা পূর্ব পরিকল্পিত। এর আগেও এ ধরনের হামলা হয়েছে অথচ বিচার পাওয়া যায় নি। এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ডিআইওয়ান) ইমতিয়াজ আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।

উলেস্নখ্য স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক তান্ডব চালায় হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা। তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বঙ্গবন্ধু স্কয়ার, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বর, রেলওয়ে স্টেশন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা, পৌর মেয়রের বাসভবন, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, জেলা মৎস্য অফিস, সার্কিট হাউজ, পৌরসভা কার্যালয়, জেলা পরিষদ কার্যালয় ও ডাকবাংলো, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব, খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানা ভবন, আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন, আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তন, মাতৃসদন, এসিল্যান্ডের কার্যালয়, সরকারি গণগ্রন্থাগার, জেলা ক্রীড়া সংস্থা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকারের কার্যালয়, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ কালীবাড়ি, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বাসভবন, তার শ্বশুরের বাসভবন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির বাসভবন, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের বাসভবনসহ প্রায় অর্ধশতাধিক সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo