• সমগ্র বাংলা

কালীগঞ্জে স্বাস্থ্য খাতে দ্বিমুখী আন্দোলন: স্থবিরতা বাড়ছে সেবা ব্যবস্থায়

  • সমগ্র বাংলা

ছবিঃ সিএনআই

গাজীপুর প্রতিনিধিঃ গাজীপুরের কালীগঞ্জে টানা আন্দোলনের কারণে স্বাস্থ্যসেবা খাতে নেমে এসেছে অচলাবস্থার মতো পরিস্থিতি। একই সময়ে দুই ভিন্ন বিভাগের কর্মবিরতিতে সাধারণ রোগী থেকে শুরু করে সেবা প্রত্যাশী সবাই ভোগান্তিতে পড়েছেন।

জানা গেছে, ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে গত ৩০ নভেম্বর থেকে ধাপে ধাপে কর্মসূচি পালন করছে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা। গত ৩০ নভেম্বর প্রথমে দফা দুই ঘণ্টা, এরপর ৩ ডিসেম্বর অর্ধদিবস এবং আজ (৪ ডিসেম্বর) থেকে শুরু হয়েছে পূর্ণদিবসের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মবিরতি কর্মসূচি।

এ ব্যাপারে কথা হয় ১০ম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ কালীগঞ্জ উপজেলা শাখার সমন্বয়কারী মো. হাফিজুর রহমান জানান, “ধারাবাহিক কর্মসূচি থেকেও যখন কোনো সাড়া মিলছে না, তখন আমরা পুরোদিনের কর্মবিরতিতে যেতে বাধ্য হয়েছি। জরুরি বিভাগ চালু থাকলেও অন্যান্য সব সেবা কার্যক্রম সীমিত রাখা হয়েছে। দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়নে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”

এ আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে কর্মরত টেকনোলজিস্ট–ফার্মাসিস্টরাও। ফলাফল হিসেবে স্থানীয় পর্যায়ে পরীক্ষাসেবা, ওষুধ প্রস্তুতকরণ থেকে শুরু করে নিয়মিত অনেক কার্যক্রমই কার্যত থমকে গেছে।

অন্যদিকে, নিয়োগবিধি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীন কর্মরত পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা, পরিবার কল্যাণ সহকারী ও পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শকেরা ২ ডিসেম্বর থেকে কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচিতে রয়েছেন। চলবে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

এফডব্লিউবি, এফডব্লিউএ এবং এফপিআই সমন্বিত পরিষদ কালীগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি এফপিআই রাকিবুল ইসলাম বলেন,“নিয়োগবিধি শতভাগ বাস্তবায়ন আমাদের ন্যায্য দাবি। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে সেই দাবিই তুলে ধরছি। সরকার দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলে আমরা সেবায় ফিরতে প্রস্তুত।”

তিনি আরও জানান, ৬–১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেবা ও প্রচার সপ্তাহ বর্জন করা হবে।“যদি দাবি মানা হয়, আমরা আবার নিয়মিত কার্যক্রমে ফিরে যাব,” যোগ করেন রাকিবুল ইসলাম।

স্থানীয় সুধী সমাজের প্রতিনিধিরা জানান, কালীগঞ্জে চিকিৎসা ও পরিবার পরিকল্পনা-দুই ক্ষেত্রেই একই সময়ে চলমান কর্মবিরতিতে জনভোগান্তি চরমে উঠেছে। আন্দোলনকারীদের দাবি যেমন ন্যায্য, তেমনি জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাও জরুরি। এখন প্রয়োজন দ্রুত সংলাপের মাধ্যমে সংকট নিরসন, না হলে স্থানীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থা আরও অচল হয়ে পড়বে।

কালীগঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোছা. নাহিদা খাতুন বলেন, “দুই বিভাগের কর্মসূচি মিলিত হওয়ায় স্থানীয় পর্যায়ে কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি উচ্চপর্যায়ে জানানো হয়েছে। আশা করছি আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমাধান আসবে।”

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রেজওয়ানা রশীদ জানান, “সেবায় বিঘ্ন ঘটলেও জরুরি কার্যক্রম চালু রেখেছি। টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের দাবিগুলো সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানানো হয়েছে। সবাইকে আলোচনার টেবিলে ফিরতে অনুরোধ করছি।”

তিনি আরও বলেন, “স্বাস্থ্যসেবা যেন স্থবির না হয়-এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এটিএম কামরুল ইসলাম বলেন, “স্বাস্থ্য খাতে চলমান কর্মসূচি যেন কোনোভাবেই জনদুর্ভোগ তৈরি না করে, সেদিকে আন্দোলনকারীদের বিশেষ নজর দিতে হবে। সেবার জায়গায় ছেদ পড়লে সাধারণ মানুষই সবচেয়ে বেশি সমস্যা ভোগ করে। সরকার সবসময়ই যৌক্তিক দাবি বিবেচনার মাধ্যমে সমাধানে আগ্রহী। আলোচনার মাধ্যমে যেকোনো সমস্যার পথ খোঁজা যায়। তাই সংলাপের পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা মানুষের মৌলিক অধিকার-আর এই অধিকার ক্ষুণ্ন করা উচিত না।”

মন্তব্য (০)





  • company_logo