নিউজ ডেস্ক : ব্যবসায়ী আশরাফুল হক (৪২) হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে জরেজুল ইসলাম (৩৯) ও শামীমা আক্তারকে (৩৩) গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও র্যাব। তাদের গ্রেফতারের তথ্য ও হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে শনিবার (১৫ নভেম্বর) পৃথক সংবাদ সম্মেলন করেছে দুই বাহিনী। সেখানে দুই আসামির জবানবন্দিতে দুই রকম তথ্য পাওয়ার কথা জানা গেছে।
র্যাব বলছে, আশরাফুলকে ফাঁদে ফেলে ১০ লাখ টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। পরে তাকে হত্যা করা হয়। আর পুলিশ বলছে, ত্রিভুজ প্রেমের কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
সকাল ১০টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করেন র্যাব-৩-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন। আসামি শামীমার বরাত দিয়ে তিনি বলেন, তার (শামীমা) সঙ্গে জরেজুলের এক বছরের বেশি সময় ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আশরাফুলকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ১০ লাখ টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করেছিলেন জরেজুল।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, আশরাফুলকে শরবতের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাওয়ান শামীমা। পরে আশরাফুল ও শামীমার ভিডিও ধারণ করা হয়। এই ভিডিও দেখিয়েই টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করা হয়। ধারণকৃত ভিডিওটি শামীমার মোবাইল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব আরও জানায়, ১২ নভেম্বর দুপুরে আশরাফুল পুরোপুরি অচেতন হয়ে পড়লে জরেজুল তাঁকে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলেন, মুখে স্কচটেপ লাগান। এরপর হাতুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করেন। এতে আশরাফুলের মৃত্যু হয়।
১৩ নভেম্বর সকালে মরদেহ গুম করতে পাশের বাজার থেকে দুটি প্লাস্টিকের ড্রাম ও অন্যান্য সরঞ্জাম আনা হয়। পরে জরেজুল চাপাতি দিয়ে লাশ টুকরা টুকরা করে দুটি ড্রামে ভরে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় হাইকোর্ট এলাকায় রেখে যান।
আশরাফুলের রক্তমাখা সাদা রঙের পাঞ্জাবি-পায়জামা, হত্যায় ব্যবহৃত দড়ি ও স্কচটেপ উদ্ধার করেছে র্যাব।
এদিকে বেলা ১২টায় রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম। সেখানে তিনি আরেক আসামি জরেজুল ইসলামের বরাতে হত্যার বর্ণনা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, হত্যার মূল আসামি জরেজুল ইসলাম মালয়েশিয়াপ্রবাসী। সেখানে থাকা অবস্থায় একটি অ্যাপসের মাধ্যমে শামীমা আক্তারের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কও হয়।
জরেজুল প্রায় দেড় মাস আগে দেশে আসেন। দেশে আসার পরও শামীমা ও জরেজুলের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে মুঠোফোনে কথাবার্তা হতো। জরেজুলের স্ত্রী এটা জেনে যান। তখন জরেজুলের স্ত্রী জরেজুলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আশরাফুল ইসলামের সহায়তা চান এবং আশরাফুল ইসলামকে শামীমার নম্বর দেন। পরে আশরাফুল শামীমার প্রেমে পড়ে যান। ভিডিও কলে তাঁদের মধ্যে যোগাযোগ হতো।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, এরই মধ্যে ১৪ লাখ টাকার বিনিময়ে জরেজুলকে জাপান পাঠানোর কথা বলেন শামীমা, যার মধ্যে ৭ লাখ টাকা তিনি দেবেন বলেও জানান। শামীমার কাছ থেকে টাকা ও জাপান যাওয়ার কাজ শুরুর জন্য ১১ নভেম্বর তিনি ও আশরাফুল রংপুর থেকে ঢাকায় আসেন। ঢাকায় আসার পর শনির আখড়ায় তারা তিনজন বাসা ভাড়া নেন।
পরে আশরাফুল ও শামীমার সম্পর্কের কথা জানতে পারেন জরেজুল। এ নিয়ে তাদের মধ্যে তর্ক হয়। একপর্যায়ে শামীমা চিৎকার করলে আশরাফুলের হাত বেঁধে জরেজুল হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করেন। পরে আশরাফুলের মুখের ভেতরে ওড়না ঢুকিয়ে স্কচটেপ দিয়ে পেঁচিয়ে দেন। এর কিছুক্ষণ পর আশরাফুল মারা যান। পরে তারা মরদেহ টুকরা করে প্লাস্টিকের ড্রামে ভরে হাইকোর্ট এলাকায় ফেলে দিয়ে আসেন।
মন্তব্য (০)