
নিউজ ডেস্কঃ গাজায় ইসরাইলের গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন মালয়েশিয়ার মুসলমানরা। কুয়ালালামপুরে শুক্রবার এ বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।
সকাল থেকেই টানা বৃষ্টি চললেও তা আটকাতে পারেনি ইসরাইলবিরোধী সমাবেশে অংশ নেওয়া হাজারও মানুষকে।
জুমার নামাজ শেষে রাজধানীর তাবুং হাজি ভবনের সামনে বিশিষ্ট বক্তাদের বক্তব্যের পর জনতা মার্কিন দূতাবাসের দিকে বিক্ষোভ মিছিল করে। স্লোগানে মুখর এই মিছিল গাজার মানুষের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে এবং ইসরাইলের আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানায়।
সমাবেশে বিশেষ গুরুত্ব পায় মালয়েশিয়ার রাজা সুলতান ইব্রাহিমের বার্তা। তিনি গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলাকে (জিএসএফ) সীমাহীন মানবতার প্রতীক আখ্যা দেন। তার মতে, খাদ্য ও ওষুধ বহনকারী স্বেচ্ছাসেবকদের আটক করা মানবিক নীতির পরিপন্থি।
রাজা বলেন, মালয়েশিয়ানসহ আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবকরা জীবন ঝুঁকি নিয়ে মানবতার বার্তা বহন করছেন। অথচ তারা কেবল খাদ্য বহন করছিলেন, তবু তাদের আটক করা হলো।
প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি আনোয়ার ইব্রাহিম নতুন ফ্লোটিলা অভিযানের বিষয়ে সতর্কতা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, এখন যাত্রা শুরু করলে তারাও আটক হবেন। অকারণে জীবন ঝুঁকিতে ফেলা উচিত নয়। ফিলিস্তিনের ৬৫ হাজার মানুষ ইতোমধ্যেই প্রাণ দিয়েছে। আমাদের দায়িত্ব হলো মানুষের জীবন বাঁচানো, মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া।
আনোয়ার বলেন, শান্তি প্রক্রিয়া ও মানবিক সহযোগিতা সমান্তরালভাবে চালাতে হবে। যদিও ট্রাম্প-প্রস্তাবিত শান্তি চুক্তি ব্যর্থ হয়েছে, তবুও অন্তত গাজার মানুষকে জোরপূর্বক বহিষ্কার থেকে রক্ষা করেছে।
মানবিক ফ্লোটিলার তৃতীয় তরঙ্গ ইতালি থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর যাত্রা শুরু করেছে।
১০টি নৌযানে সাংবাদিক, চিকিৎসক, সংসদ সদস্য ও মানবিক কর্মীরা রয়েছেন। মালয়েশিয়া থেকেও নয়জন প্রতিনিধি এতে অংশ নিয়েছেন।
‘কনসায়েন্স’ জাহাজে রয়েছেন প্রফেসর ইমেরিটাস ড. মোহাম্মদ আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে আটজন প্রতিনিধি, যাদের মধ্যে চারজন চিকিৎসক। ‘ইয়ট উম্মে সাদে’-তে রয়েছেন চিকিৎসক ড. মাজিয়াহ মোহাম্মদ।
প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান ইসরাইলের বাধা ও আটকের নিন্দা করেছেন। তিনি ফিলিস্তিনি প্রশ্নে তুরস্ককে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে সক্রিয় রাখার অঙ্গীকার করেন এবং গাজায় মানবিক করিডর প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইন্দোনেশিয়া প্রকাশ্যে ফ্লোটিলা অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, গাজার মানবিক সঙ্কটে নিরব থাকা মানে অন্যায়ের অংশীদার হওয়া। তবে কূটনৈতিক চাপে তারা মিশনে সরাসরি অংশ না নিলেও রাজনৈতিক সমর্থন অব্যাহত রেখেছে।
কাতার দীর্ঘদিন ধরে গাজার আর্থিক ও মানবিক সহায়তায় মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। দোহা খোলাখুলিভাবে ইসরাইলের এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ফ্লোটিলা আটক বিষয়ে আরও কড়া প্রতিক্রিয়া জানাতে আহ্বান জানিয়েছে। কাতার মনে করে, এমন ঘটনা শান্তি প্রচেষ্টাকে আরও দুর্বল করে।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবস্থান তুলনামূলকভাবে সতর্ক। ওয়াশিংটন মানবিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করলেও ইসরাইলের নিরাপত্তা উদ্বেগকে সমর্থন করছে। ইউরোপের কিছু দেশ (যেমন স্পেন, আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে) ফিলিস্তিনের পক্ষে সরব হলেও বৃহত্তর ইইউ একটি ভারসাম্যপূর্ণ কূটনৈতিক ভাষায় সীমাবদ্ধ থেকেছে।
মালয়েশিয়া, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া ও কাতারের অবস্থান দেখায় যে মুসলিম বিশ্বের জনমানসে ফিলিস্তিন প্রশ্নে এক ধরনের ঐক্য রয়েছে। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বের দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থান ফ্লোটিলা আন্দোলনকে বৈশ্বিক কূটনীতিতে কাঙ্ক্ষিত শক্তি এনে দিতে পারছে না।
তবুও এই ধারাবাহিক মানবিক মিশন প্রমাণ করে, গাজার মানুষকে নিয়ে বিশ্বের সাধারণ জনগণ এখনও নীরব নয় এবং মালয়েশিয়া এই বৈশ্বিক সংহতির অগ্রভাগে রয়েছে।
মন্তব্য (০)