
নিউজ ডেস্ক : ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সাড়ে ১০ লাখ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরই মধ্যে শুরু হওয়া এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলবে ভোট গ্রহণের চার-পাঁচদিন আগ পর্যন্ত। ২৪টি কর্মসূচিকে প্রাধান্য দিয়ে ঘোষিত ইসির নির্বাচনী রোডম্যাপেও (পথনকশা) এই সময়সীমায় প্রশিক্ষণ কার্যক্রম আয়োজনের কথা বলা হয়েছে।
গত ২৯ আগস্ট ও ৩০ আগষ্ট ৮০ জন কোর প্রশিক্ষকের প্রশিক্ষণের প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে এই কার্যক্রম শুরু হয়। ইসি সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা কোর প্রশিক্ষক হিসেবে প্রশিক্ষণ নেন। পর্যায়ক্রমে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোর প্রশিক্ষক তৈরি করা হবে। যারা ভোটের আগে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেবেন। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (ইটিআই) তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালানো হবে।
ইসি সূত্র বলছে, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচনী বিধিমালাসহ ২৩টি বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এই প্রশিক্ষণের জন্য প্রায় চার মাস সময় লাগবে। তবে নির্বাচন সংক্রান্ত মূল প্রশিক্ষণটা হবে প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারদের। এদের সংখ্যা ১০ লাখের বেশি হবে। বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত করে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
ইটিআই'র মহাপরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান সমকালকে জানান, এবারের নির্বাচনের চ্যালেঞ্জটা একটু ভিন্ন। বিগত তিনটি নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে এবার যতটুকু পারা যায় স্বচ্ছ লোক দিয়ে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা করা হবে। যাতে একটি সুন্দর, গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উপহার দেয়া যায়।
এর আগে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও অন্যান্য নির্বাচনী প্রশিক্ষণ কর্মসূচির বিষয়ে ইসি ঘোষিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সে অনুযায়ী তফশিল ঘোষণার পূর্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের ‘ট্রেনিং অব কোর ট্রেনিং’ (টিওটি) সম্পন্ন করার জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন ও নির্দেশনা প্রদান কার্যক্রম চলমান থআছে।
ইসির রোডম্যাপ অনুযায়ী, আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে টিওটি ট্রেইনারদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন ও নির্দেশনা প্রদান করা হবে। টিওটি ট্রেইনারদের মধ্যে রয়েছেন- নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ ও নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সব কর্মকর্তা, সিনিয়র জেলা/জেলা নির্বাচন অফিসার, উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসার, সহকারী উপজেলা/সহকারী থানা নির্বাচন কর্মকর্তা, প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ও অন্য বিভাগের কর্মকর্তা। পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে মাস্টার ট্রেইনারদের প্রশিক্ষণ (টিওটি) এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের প্রশিক্ষণ (টিওটি) প্রদান করা হবে। এ সময় ৩ হাজার ৬০০ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।
ইসি সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে তাদের রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী ১ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে মাঠ প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তা (বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার কার্যালয়ের কর্মকর্তা) ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ/ব্রিফিংয়ে যোগদানের অনুমতি প্রদানের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারদেরও প্রশিক্ষণ/ব্রিফিং করা হবে। নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর মাঠ পর্যায়ে আচরণবিধি প্রতিপালনের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে অনলাইনে প্রশিক্ষণ/ব্রিফিং করা হবে। আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটির সদস্যদের প্রশিক্ষণ বা ব্রিফিং দেয়ার বিষয়টিও প্রস্তাবনায় রয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, ভোট গ্রহণের পাঁচ থেকে সাতদিন আগে জুডিশিয়াল ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটদের প্রশিক্ষণ বা ব্রিফিং দেওয়া হবে। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা নির্বাচনের পূর্বের দুইদিন, নির্বাচনের দিন এবং নির্বাচনের পর দু’দিন মাঠ পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবেন।
এ বিষয়ে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান আরও বলেন, নির্বাচনের প্রশিক্ষণ একটা লম্বা প্রক্রিয়া। হাতে যে কয়েকমাস সময় আছে এই সময়ের প্রশিক্ষণ আমাদের শেষ করতে হবে।
তিনি বলেন, এর সঙ্গে আইনশৃঙ্খলার প্রশিক্ষণের বিষয় আছে। এখানে ডিভিশনাল কমিশনার, ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার, তাদের ট্রেনিং করা হবে। তারপরে ডিসি-এসপিদের বিভিন্ন ধাপে-ধাপে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এরপর ইউএনও-দের ট্রেনিং দেওয়া হবে। আনসারের প্রশিক্ষণ হবে। আবার টেকনিক্যাল যে বিষয় আছে, সে বিষয়ে দেশের বিভিন্ন জেলাতে আমাদের যে প্রোগ্রামার ও অ্যাসিস্টেন্ট প্রোগ্রামার আছে- তাদেরকে অর্থাৎ প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারদের মূল প্রশিক্ষণটা দিতে হবে। এদের সংখ্যাটা ১০ লাখের ওপরে হবে।
এবার ট্রেনিংয়ে নতুনত্ব নিয়ে আসা হয়েছে উল্লেখ করে এস এম আসাদুজ্জামান বলেন, প্রশিক্ষণে তিনটা পার্ট থাকে। আমাদের মূলত একটা পার্ট হলো- আমরা ওদেরকে নির্বাচনী আইন-কানুন বিধি-বিধান সম্পর্কে ধারণা দেবো। দ্বিতীয়টা হলো, তারা কীভাবে কাজ করবে। কাজের প্রসিডিউরটা কেমন হবে। এবং ভোট কেন্দ্রে মালামাল সংগ্রহ, ভোট গ্রহণ থেকে শুরু করে ভোট গণনা পর্যন্ত যত কাজ আছে পুরো প্রক্রিয়াটা শেখানো হবে। আরেকটা হলো, অতীতের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় তাদের মধ্যে কনফিডেন্স বিল্ডআপ করার জন্য একটা মোটিভেশনাল কাজ করা। তাদের আত্মবিশ্বাসটা যাতে ফিরে আসে সে জন্য একটা মোটিভেশনাল প্রোগ্রাম দেওয়া। তাদেরকে আমরা ওই পর্যায়ে নিয়ে আসবো, যেন প্রিসাইডিং অফিসার মনে করেন, তিনি ওই কেন্দ্রের জন্য ‘চিফ ইলেকশন কমিশনার’। এই কনফিডেন্ট লেবেলটা বাড়ানোর জন্য আমরা কাজ করতেছি। আরেকটা বিষয় হলো, একজন প্রিজাইডিং অফিসার কি ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে, তা আলোচনা করা। এক্ষেত্রে আমরা হাইপোথিটিক্যালি বিগত তিনটা নির্বাচনের যে সমস্যাগুলো হয়েছে সেগুলোর রেফারেন্স দিয়ে তাদেরকে সতর্ক ও প্রশিক্ষিত করা।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। এই কর্মযজ্ঞে যারা জড়িত তারা যদি সঠিক ট্রেনিংপ্রাপ্ত না হয় তাহলে নির্বাচনে সমস্যা হতে পারে। আমরা চাচ্ছি, ন্যূনতম বিচ্যুতি হবে না। সবাই তার কাজটা যথাযথভাবে করবে। আইন ও বিধি অনুযায়ী করবে এবং সততা ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে। এটা যাতে নিশ্চিত করা যায়, সে জন্যই এই প্রশিক্ষণ।
মন্তব্য (০)