
বিনোদন ডেস্ক : ডা. এজাজুল ইসলাম। নন্দিত অভিনেতা ও চিকিৎসক। আরটিভিতে আজ শুরু হচ্ছে তাঁর অভিনীত ধারাবাহিক নাটক ‘ম্যানেজ মাস্টার’। এ নাটক, অভিনয় নিয়ে নিজস্ব ভাবনা ও অন্যান্য প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন রাসেল আজাদ বিদ্যুৎ
আজ শুরু হচ্ছে আপনার নতুন ধারাবাহিক নাটক ‘ম্যানেজ মাস্টার’। এর গল্প ও চরিত্র আপনার অন্যান্য নাটক থেকে কতটা আলাদা? এটিও হাসির নাটক। তবে আমার আগের নাটকগুলো থেকে ‘ম্যানেজ মাস্টার’-এর গল্প দর্শকের কাছে একটু আলাদা মনে হবে। অনেক চরিত্র, যাদের চিন্তা-ভাবনা একেকজনের একক রকম। তাদের বিভিন্ন ধরনের কার্যকলাপ নিয়ে এগোবে গল্প। পরিচালক সঞ্জিত সরকার নিজেই গল্প লিখেছেন। তিনি চেষ্টা করেছেন, হাস্যরসের মধ্য দিয়ে সুবিধাবাদী মানুষগুলোর অবয়ব তুলে ধরার। যারা নিজেদের সুবিধা আর স্বার্থের জন্য সবকিছু ম্যানেজ করে চলে। এ গল্পের মতো আমার অভিনীত চরিত্রেও কিছুটা ভিন্নতা আছে।
‘ম্যানেজ মাস্টার’ নাটকে কী ধরনের চরিত্রে আপনাকে দেখা যাবে?
এ নাটকে আমি একজন বয়স্ক মানুষের চরিত্র তুলে ধরেছি; যাকে বলা হয় বুড়ো বদমায়েশ। বয়সে বুড়ো হলেও এলাকার তরুণ ছেলেপেলেদের সঙ্গেই তার ওঠা-বসা। সে কারণে নিজেকে কখনও সে বুড়ো ভাবতে চায় না। ছেলেপেলেদের সঙ্গে মিশে তাদের নানা ধরনের বদ বুদ্ধি দেওয়া আর নানা বিষয়ে প্যাঁচ কষে যাওয়াই তার কাজ।
দীর্ঘ অভিনয় জীবনে আপনাকে হাসির গল্পের নাটকে বেশি অভিনয় করতে দেখে গেছে। এর কারণ কী?
যখন কোনো অভিনেতা-অভিনেত্রী এক ধরনের চরিত্র দর্শক সফলতা পায়, তখন নির্মাতারাও চান, সেই শিল্পী বা তারকাকে একই ধরনের গল্প ও চরিত্রে তুলে ধরতে। মূলত দর্শকের ভালো লাগার বিষয়টি মাথায় রেখেই তারা এ কাজটি করেন। আমার বেলায়ও এটিই হয়েছে। অথচ খেয়াল করলে দেখবেন, অভিনয়জীবনের শুরুতে কিন্তু হাসির গল্পে সেভাবে কাজ করা হয়ে ওঠেনি। ‘অদেখা ভুবন’, ‘সবুজ সাথী’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ নাটক-সিনেমাগুলোয় সিরিয়াস চরিত্রেই অভিনয় করেছি। আসলে আমাকে দিয়ে যে কমেডি চরিত্র পর্দায় তুলে ধরা যেতে পারে, সেই আইডিয়াটা কিন্তু হুমায়ূন স্যারের [হুমায়ূন আহমেদ]। তিনি আমাকে নিয়ে নিরীক্ষাটা চালিয়ে ছিলেন। হাসির গল্পে আমার অভিনয় দর্শক পছন্দ করায়, একের পর এক কমেডি নাটকে আমাকে অভিনয় করিয়েছেন।
হাসির গল্পের নাটকে একনাগাড়ে অভিনয় করাতে একঘেঁয়েমি চলে আসেনি?
হুমায়ূন স্যারের সঙ্গে যখন কাজ করেছি, তখন অনেক আনন্দ নিয়েই একেকটি কাজ করেছি। কখনও একঘেঁয়েমি পেয়ে বসেনি। এর বড় কারণ, স্যারের প্রতিটি গল্পে একধরনের ম্যাজিক থাকত। চরিত্রগুলোর মুখে এমন কিছু সংলাপ জুড়ে দিতেন, যা দারুণভাবে মনে ছাপ ফেলত। এখন যেসব কাজ করছি, তার গল্প একই রকম, চরিত্রও একই ধরনের মনে হয়। মূলত এখনকার এসব কমেডি নাটকে অভিনয় করতে গিয়ে একঘেঁয়েমি চলে এসেছে। তারপরও অভিনয়ে করে যাচ্ছি। কারণ, অভিনয় ছাড়া থাকতে পারি না।
বলছেন অভিনয় ছাড়া থাকতে পারেন না বলেই এখনও ক্যামেরার সামনে কাজ করে যাচ্ছেন। ঠিক কী কারণে অভিনয়ে আত্মতৃপ্তির অভাব দেখা দিয়েছে বলে মনে করেন?
ভালো গল্প আর ব্যতিক্রমী চরিত্র এখন আর সেভাবে চোখে পড়ে না। নির্মাতা, নাট্যকার, অভিনয়শিল্পী অনেক কিন্তু মনে ছাপ ফেলার মতো ক’টি কাজ হচ্ছে? এই প্রশ্ন কিন্তু আমার নয়, দর্শকের। তরুণ নির্মাতাদের অনেকে ভালো কাজ করছেন। নির্মাণে সময়ের ছাপ উঠে এলেও গল্পে খুব একটা বৈচিত্র্য খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এখন ভালো লেখকের বড়ই অভাব। গল্প ভালো না হলে ঝা-চকচকে দৃশ্য দেখেও আনন্দ নেই।
হুমায়ূন আহমেদের চরিত্রগুলো দর্শক মনে আপনার যে অবয়ব গড়ে দিয়েছে, তাকে ছাপিয়ে আলাদা কিছু করা সম্ভব?
অসম্ভব নয়। ওই যে বললাম, এ ধরনের চরিত্রে সাফল্য পেলে, সবাই একইভাবে তাঁকে দেখতে চান, তেমনি যে রূপ দর্শক মনে গেঁথে গেছে, তাকে নতুনভাবে তুলে ধরা খুবই কঠিন। তাই যখন যে কাজই করি না কেন, জনপ্রিয় চরিত্রগুলোর সঙ্গে তার তুলনা চলে আসবেই।
নাটকে না হলেও সিনেমায় তো ভিন্ন ধরনের গল্প ও চরিত্রে কাজ করার সুযোগ হয়েছে...
সিনেমায় অভিনয়ে কিছুটা আত্মতৃপ্তি ছিল। এটি অস্বীকার করব না। পরিচালক হিমেল আশরাফের ‘রাজকুমার’ সিনেমার ‘সিগন্যাল ভাই’ চরিত্রে অভিনয়ের পর অন্যরকম এক ভালোলাগা কাজ করেছিল। শুধু তাই নয়, প্রচুর দর্শক সাড়াও পেয়েছি। এরপর রায়হান রাফী পরিচালিত ‘তাণ্ডব’-এ আলাদা একটি চরিত্র তুলে ধরেছি, যা গল্পের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক ছিল। অভিনয় করে আনন্দ পেলেও বড়পর্দায় কাজের সংখ্যাও কিন্তু বেশি নয়।
আপনি পেশায় চিকিৎসক। দেশ-বিদেশের অগণিত দর্শকের কাছে পরিচিতি অভিনেতা হিসেবে। এই বিষয়টি কীভাবে দেখেন?
অভিনেতা হিসেবে দর্শকের কাছে যে ভালোবাসা পেয়েছি, তা কখনও ভুলবার নয়। তারপর যদি পরিচয়ের কথা বলেন, তাহলে আমি প্রথমে ডাক্তার, পরে অভিনেতা। যত কাজই থাকুক, চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য আমি সবসময় প্রস্তুত থাকি।
মন্তব্য (০)