• লিড নিউজ
  • রাজনীতি

বিএনপির বিজয় র‌্যালিতে জনস্রোত গণতন্ত্র অভিযাত্রায় ঐক্যের ডাক তারেক রহমানের

  • Lead News
  • রাজনীতি

ছবিঃ সংগৃহীত

নিউজ ডেস্ক : গণতন্ত্র অভিযাত্রায় জাতীয় স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

জুলাই ঘোষণাপত্র ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, গণতন্ত্রকামী জনগণের সামনে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এটা কাজে লাগাতে পারলে দেশে আর ফ্যাসিবাদের জন্ম হবে না। ফ্যাসিবাদের আমলে কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্যই নিরাপদ ছিল না। সবার রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল।

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বুধবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির বিজয় র‌্যালির পূর্বে সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

বিকাল সাড়ে ৩টায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শুরু হয়। পরে বর্ণাঢ্য বিজয় র‌্যালি বের হয়। পূর্বঘোষিত এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দুপুরের আগেই নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনে জড়ো হন। সময়ের সঙ্গে বাড়তে থাকে নেতাকর্মীদের সংখ্যা। সমাবেশ শুরুর আগেই নয়াপল্টন এলাকায় লাখো নেতাকর্মীর ঢল নামে। ফকিরাপুল থেকে কাকরাইলের মোড় পর্যন্ত দীর্ঘ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকা মহানগর ছাড়াও আশপাশের জেলাগুলো থেকেও নেতাকর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুন, জাতীয় ও দলীয় পতাকা নিয়ে র‌্যালিতে অংশ নেন। 

সমাবেশ শেষে বিজয় র‌্যালিটি জনস্রোতে রূপ নেয়। পরে বিজয় নগর, পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেস ক্লাব, কদম ফোয়ারা, মৎস্যভবন মোড়, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন সড়ক দিয়ে শাহবাগে গিয়ে শেষ হয়। 

সরেজমিন দেখা যায়, বিএনপি ছাড়াও যুবদল-ছাত্রদলসহ অন্যান্য সহযোগী ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরাও র‌্যালিতে যোগ দিয়েছেন। হাতে ও মাথায় জাতীয় পতাকা, দলীয় পতাকাসহ বিভিন্ন রঙের ক্যাপ পরে র‌্যালিতে অংশ নিয়েছেন তারা। র‌্যালির সামনে ছিল ব্যান্ড পার্টিও। ধানের শীষ দিয়ে সেজে অনেকে এসেছেন র‌্যালিতে। এছাড়াও র‌্যালিতে মুক্তিযোদ্ধা দলের আয়োজনে প্রতীকী কারাবন্দি পতিত আওয়ামী সরকারের কয়েকজন এমপি-মন্ত্রী। এছাড়াও প্রতীকী ‘খাঁচাবন্দি’ রূপে দেখা গেছে শেখ হাসিনাকে। ঢাকা ছাড়াও সব বিভাগীয় শহরে একযোগে বিজয় র‌্যালির কর্মসূচি করছে বিএনপি।

র‌্যালি-পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিভিন্ন ইস্যুতে আমাদের (রাজনৈতিক দল) মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন মতভেদ থাকবে। কিন্তু সেই ভিন্নমত নিরসনে আলোচনা হবে। তবে জাতীয় পরিষদে গণতন্ত্রের পক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যাতে মুখ দেখা দেখি বন্ধ না হয়, সেই লক্ষ্যে জাতীয় স্বার্থে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রয়োজন। কারণ, আমি বিশ্বাস করি- ধর্ম, দর্শন, মত যার যার, রাষ্ট্র আমাদের সবার।

তারেক রহমান বলেন, জনগণের রায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে বিএনপি কী ধরনের রাষ্ট্র, সরকার এবং রাজনীতি পরিচালনা করবে- ৩১ দফার মাধ্যমে তার একটি রূপরেখা জনগণের সামনে আমরা উপস্থাপন করেছি। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করে সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে। দেশ এবং জনগণের কল্যাণে এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য বিএনপি জনগণের সমর্থন এবং সহযোগিতা চায়।

সংসদ নির্বাচনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশের জনগণের সরাসরি ভোটের কাছে দায়বদ্ধ, জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মঙ্গলবার জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে একটি সময়সীমা ঘোষণা করেছে। জনগণের অভিপ্রায় বাস্তবায়নের দাবিতে জুলাই সনদ ঘোষণা করা হয়েছে। জনগণের অধিকার বাস্তবায়নের এসব উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, মানুষের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার যাত্রাপথে বর্তমানে আমরা ইতিহাসের যে সন্ধিক্ষণ পার করছি, এই ঐতিহাসিক সময়টির জন্য দেশের গণতান্ত্রিক জনগণকে দীর্ঘ দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করতে হয়েছে। ফ্যাসিবাদ শাসনের দীর্ঘ সময়ে এই আন্দোলনে আমরা আমাদের হাজারো সহকর্মীকে হারিয়েছি, আমাদের অনেক সন্তান-স্বজনের বুকের তাজা রক্ত দেখতে হয়েছে।

তিনি বলেন, বিরোধী আন্দোলনের সময় বিএনপিসহ বিরোধী দল এবং মতের নেতাকর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে লাখ লাখ মিথ্যা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দেওয়া হয়েছে। বিএনপির এমন নেতা রয়েছেন যাদের বিরুদ্ধে শতাধিক, দুইশ-তিনশ মামলা রয়েছে; এমনকি ৪ শতাধিক মামলা রয়েছে। গুম-অপহরণের শিকার হয়েছেন বিএনপিসহ বিরোধী দলের শত শত রাজনৈতিক নেতাকর্মী। শুধুমাত্র ২০২৪ সালে গণ-অভ্যুত্থানে দেড় হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। খুনিদের বন্দুকের নল থেকে মায়ের কোলে থাকা চার বছরের শিশুও রেহাই পায়নি। ক্ষমতালোভী ফ্যাসিস্টদের কারণে আমাদের অনেক সাহসী সেনা কর্মকর্তা হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছেন, বিডিআরেরে নাম পর্যন্ত পাল্টে দেওয়া হয়েছে, ভেঙে দেওয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুলিশের মনোবল।

তারেক রহমান বলেন, পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের আমলে দেশে অন্ধকারের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছিল। আমি বলব, আজকের এই অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আলোর পথে যাত্রা। তবে এই যাত্রা কিন্তু খুব সহজ নয়। বর্তমানে দেশের জনগণের সামনে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার এক অপার সম্ভাবনা এবং সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমরা যদি এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশের জনগণের রাজনৈতিক শক্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারি, জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে ভবিষ্যতে আর কেউ ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ পাবে না।

তিনি বলেন, দেশকে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারবে না, আমাদেরকে আর কখনো চব্বিশের দৃশ্য দেখতে হবে না। 

গণতন্ত্র না থাকলে কেউই আমরা নিরাপদ না- এ মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, পতিত সরকার আমাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল।সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নিয়ে গণতন্ত্রকামী জনগণের জন্য সমগ্র বাংলাদেশটাকেই বর্বর বন্দিখানা, আয়নাঘর বানিয়ে ফেলা হয়েছিল।

তিনি বলেন, দেশে যদি গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন না থাকে, তাহলে নারী কিংবা পুরুষ- আমরা কেউই নিরাপদ নই। একমাত্র গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনই আমাদের নিরাপত্তা দিতে পারে। তাই আসুন- জনগণের গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্র এবং সরকারে জনগণের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকারগুলোর সুষ্ঠু চর্চা করি।

এ সময় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বিএনপির নেতাকর্মীরা জেল খেটেছে, নির্যাতিত হয়েছে, কিন্তু কারো কাছে মাথানত করেনি। তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে লড়াই চালিয়ে গেছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক বক্তব্য রাখেন। 

এছাড়া র‌্যালিতে বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান রিপন, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, শাহজাদা মিয়া, লুৎফুজ্জামান বাবর, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেলসহ কেন্দ্রীয়, অঙ্গ-সংগঠন, সহযোগী সংগঠনের নেতারা অংশ নেন।

 

মন্তব্য (০)





image

নির্বাচনের আগে সংস্কার, বিচার ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা চায় ...

নিউজ ডেস্ক : জুলাই ঘোষণাপত্র ‘পরিপূর্ণ’ হয়নি এবং অন্তর্বর্তী...

image

গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট অন্তর্ভুক্ত না করলে জুলাই ঘোষণা...

নিউজ ডেস্ক : জুলাই ঘোষণাপত্রে গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট অন্তর্ভুক্ত না ক...

image

নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ

নিউজ ডেস্কঃ দেশে আরেকটি নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ হ...

image

জুলাই ঘোষণাপত্র বর্জনের ঘোষণা দিল গণঅধিকার পরিষদ

নিউজ ডেস্কঃ গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট অন্তর্ভুক্ত না কর...

image

‎বাংলাদেশ হবে সবচেয়ে কার্যকর গণতন্ত্রের একটি দেশ: সালাহউদ...

নিউজ ডেস্কঃ বাংলাদেশ সবচেয়ে কার্যকর গণতন্ত্রের একটি দে...

  • company_logo