
নিউজ ডেস্কঃ ‘জুলাই থাকবে। এটা মনে করিয়ে দেবে যেকোনো স্বৈরাচারী বা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা এ দেশে টিকতে পারবে না। মীর মুগ্ধরা সেটি ঠেকিয়ে দেবে।’ বলেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
সোমবার দুপুরে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের লেকড্রাইভ রোডে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আয়োজনে ‘শহীদ মুগ্ধ মঞ্চ’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা ফরিদা বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের বীজ যেখানে রয়ে গেছে, সেটিকে উপড়ে ফেলতে হবে। যদি তা না পারি, তাহলে শহীদের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। আমরা চাই না আর কোনো মায়ের বুক খালি হোক, কোনো বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ উঠুক। সেই বাংলাদেশই আমরা দেখতে চাই।’
রাষ্ট্র ও শাসনব্যবস্থার মৌলিক সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘আমরা হয়তো থাকব না, সরকারও বদলাবে। কিন্তু রাষ্ট্র বদলানোর কাজ আমাদের সবাইকে মিলে করতে হবে।’
পুলিশ ও সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাব দিয়ে ফরিদা আখতার বলেন, ‘আমরা আন্দোলন করব, প্রতিবাদ করব। কিন্তু আমাদের বুকে গুলি করার মতো কোনো পুলিশ বাহিনী যেন তৈরি না হয়। যে পুলিশ আমাদের সন্তানদের বুকে গুলি করে, সে বাহিনী আমরা চাই না। আর রাষ্ট্র বদলাতে হলে নতুন সংবিধানের কথা আসবেই। আমাদের সে আলোচনায় যেতে হবে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। সঞ্চালনায় ছিলেন জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাবেক সিইও ও শহীদ মীর মুগ্ধের ভাই মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ।
সে অনুষ্ঠানে ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা। তিনি বলেন, ‘এক বছর পার হয়ে গেলেও কাঙ্ক্ষিত সংস্কার দেখা যাচ্ছে না। বিচারব্যবস্থা ও প্রশাসনের সংস্কার অপরিহার্য। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুত সংস্কার এখনও বাস্তবায়িত হয়নি।’
ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘মুগ্ধ ও অন্যরা যেভাবে এই পাবলিক স্পেস ব্যবহার করে প্রতিবাদ করেছে, সেই স্পেসগুলো ঢাকার মধ্যে আরও তৈরি করতে চাই। খাল খনন বা রাস্তা পরিষ্কারের পাশাপাশি দখল হওয়া এই স্পেসগুলো ফিরিয়ে আনার সংগ্রামও গুরুত্বপূর্ণ।’
শহীদ পরিবারের বিচার ও সংবিধান সংস্কারের দাবিঃ
দুপুরে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টর লেকড্রাইভ রোডের খালি জায়গায় শহিদ মুগ্ধ মঞ্চের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসে জুলাই হত্যাকারীদের বিচার ও সংবিধান সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন উত্তরার জুলাই আন্দোলনের শহিদ নাইমা সুলতানার মা আইনুন্নাহার বেগম ও আন্দোলনে সর্বকনিষ্ঠ শহিদ জাবির ইব্রাহিমের বাবা কবির হোসেন ভূঁইয়া।
উত্তরার জুলাই আন্দোলনে শহীদ হওয়া নাইমা সুলতানার মা আইনুন্নাহার বেগম বলেন, ‘গত বছরের জুলাইয়ে এত মানুষ শহীদ হলো, কিন্তু একটি হত্যারও বিচার হচ্ছে না কেন? ড. ইউনুস বলেছিলেন—প্রতিটি শহীদের হত্যার বিচার হবে। এখনও কিছুই দেখছি না। যারা আমাদের সন্তানদের হত্যা করেছে, তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে। মাননীয় উপদেষ্টার কাছে আমার অনুরোধ—আমি আমার সন্তানের হত্যার বিচার চাই।’
শিশু শহীদ জাবির ইব্রাহিমের বাবা কবির হোসেন বলেন, ‘১৯৭২ সালের সংবিধান আর এই দেশে চলবে না। আমরা সেটিকে ছুড়ে ফেলতে চাই। যারা একাত্তরের চেতনা নিয়ে এতদিন রাজনীতি করেছে, সেই চেতনার ব্যবসা এবার বন্ধ করতে হবে। ২৪-এর শহীদ ও আহতরাই এই দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দিল্লির দাসত্ব মেনে নেব না, আমেরিকার দাসত্বও মেনে নেব না। এই রক্ত কাউকে দাস বানানোর জন্য দেওয়া হয়নি।’
মন্তব্য (০)