
বাকৃবি প্রতিনিধি : বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) গণ-অভ্যুত্থানবিরোধী কার্যক্রম ও আবাসিক হলের শিক্ষার্থীকে ছাত্রদল ও শিবির ট্যাগ দিয়ে নির্যাতনের দায়ে ১৫৪ জন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সোমবার (৪ আগষ্ট) বিকেলে বাকৃবির রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। এই বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে দেখা যায়, তিনটি বিষয়ের উপর ওই শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
প্রজ্ঞাপন সূত্রে জানা যায়, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণের কারণে যারা ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে শারীরিক, মানসিক নির্যাতন ও হয়রানি করেছে; ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট তারিখে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারকে সমর্থন করে “শেখ হাসিনাতেই আস্থা" এবং "ঘরে ঘরে খবর দে, এক দফার কবর দে" স্লোগান দিয়ে “শান্তি মিছিল” এর মাধ্যমে জুলুম, নির্যাতন ও গণহত্যার উস্কানি ও সমর্থন প্রদান করেছে এবং ২০২২ সালের ২৩ ডিসেম্বর আশরাফুল হক হলে বিকাল ৫ টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চারজন শিক্ষার্থীকে ছাত্রদল ও শিবির ট্যাগ দিয়ে অমানবিক শারীরিক নির্যাতনের সাথে জড়িতদেরকে চিহ্নিত করে মোট তিনটি কেস স্টাডিতে এই শান্তি প্রদান করা হয়েছে।
এর মধ্যে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণের কারণে নির্যাতন ও হয়রানি; বিগত ২৪ সালের ৪ আগস্ট “শান্তি মিছিল” এর মাধ্যমে জুলুম, নির্যাতন ও গণহত্যার উস্কানি ও সমর্থন প্রদান করায় মোট ৫৭ জন শিক্ষক, ২৪ কর্মকর্তা ও ২১ কর্মচারীকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। শিক্ষকদের মধ্যে ৬ জনকে বরখাস্ত, ১২ জনকে অপসারণ, ৮ জনকে নিম্নপদে অবনমিতকরণ ও ৩১ জনকে ভর্ৎসনা করা হয়েছে। কর্মকর্তাদের মধ্যে ৮ জনকে বরখাস্ত, ৮ জনকে অপসারণ, ৭ জনকে ভর্ৎসনা এবং ১ জনকে অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে। কর্মচারীদের মধ্যে ২ জনকে বরখাস্ত এবং ১৯ জনকে ভর্ৎসনা করা হয়েছে।
বিগত সালের ৪ আগস্ট বাকৃবি ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের যেসকল সন্ত্রাসীরা বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে "শান্তি মিছিল" এর নামে একটি সন্ত্রাসী মিছিল ও আন্দোলনকারীদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করায় মোট ৩১ জন ছাত্রকে শাস্তির আওতায় এনেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এদের মধ্যে সার্টিফিকেট বাতিল করা হয়েছে ২৪ জন ছাত্রের এবং আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে ৭ জন ছাত্রকে।
এছাড়া ২০২২ সালে আশরাফুল হক হলে চারজন শিক্ষার্থীকে ছাত্রদল ও শিবির ট্যাগ দিয়ে নির্যাতনের সাথে জড়িত ২ জন শিক্ষক, ১৮ জন ছাত্র ও ১ জন কর্মকর্তাকে চিহ্নিত করে শান্তি প্রদান করা হয়েছে। দুই শিক্ষকের মধ্যে একজনকে নিম্নপদে অবনমিতকরণ ও একজনকে পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করা হয়েছে। ছাত্রদের মধ্যে সার্টিফিকেট বাতিল করা হয়েছে ১৫ জনের এবং আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে ৩ জন ছাত্রকে।
এর আগে, গত ১৮ মে, ২০২৫ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩২৮তম সিন্ডিকেট অধিবেশনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিশনের করা বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তির সুপারিশের অনুমোদন দেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আজ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রশাসন।
এই বিষয়ে বাকৃবির গণতদন্ত কমিশনের সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান সরকার বলেন, তদন্ত কমিশন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করেছিল। সেই সুপারিশের প্রেক্ষিতে আজ বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়। একইসাথে আশরাফুল হক হলের ঘটনার জন্য ও অভিযুক্তদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেয়া হয়েছে।
মন্তব্য (০)