
রংপুর ব্যুরোঃ দীর্ঘ এক যুগ ধরে বিকল রাডার নিয়ে চলা রংপুর আবহাওয়া কার্যালয়ে স্থাপিত নতুন ডপলার রাডারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। ফলে রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলে আবহাওয়ার তথ্য জানার নতুন দুয়ার খুলল। স্বস্তি ফিরেছে আবহাওয়া দপ্তরেও।
আজ রবিবার সকালে রংপুর আবহাওয়া, রাডার ও ভূ-কম্পন পর্যবেক্ষণাগারে স্থাপিত ডপলার রাডার স্টেশনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
এ সময় বাংলাদেশ আবহাওয়া বিভাগের পরিচালক মো. মোমেনুল ইসলাম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও আন্তর্জাতিক আবহাওয়া পরামর্শদাতা ইয়োশিহিসা উচিদা উপস্থিত ছিলেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাড়ে ৪ শ কিলোমিটারের মধ্যে বৃষ্টিপাতের ধরন, ঘূর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস দিতে পারবে রাডারটি। ফলে উপকৃত হবেন পুরো উত্তরাঞ্চলের মানুষ।
আবহাওয়া অফিস জানায়, বাংলাদেশ ও জাপানের সহযোগী সংস্থা জাইকার অর্থায়নে রংপুরে নতুন রাডার স্টেশন স্থাপনের কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের ১ এপ্রিল। এর আগে এই রাডার রংপুরে ছিল না। এর ফলে দীর্ঘ এক যুগ পরে চালু হল এটি।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ ও আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এর মাধ্যমে উন্মোচিত হল আবহাওয়ার তথ্য জানার নতুন দুয়ার।যার সুফল ভোগী উত্তরের সব জেলার মানুষ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডপলার রাডার কৃষিনির্ভর উত্তরাঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এটি উদ্বোধন হওয়ার মধ্য দিয়ে সাড়ে ৪০০ কিলোমিটার এলাকার মানুষ আগাম আবহাওয়ার তথ্য জানার নতুন দিগন্তে প্রবেশ করবে। নতুন এই রাডার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কয়েক ঘণ্টা আগে তথ্য দিতে পারবে। এতে করে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে আগাম প্রস্তুতি গ্রহণের সুযোগ থাকায় দুর্যোগে কমবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ।
ডপলার রাডার স্থাপনের কাজটি তত্ত্বাবধান করছে জাপানের সিমিজু করপোরেশন।এ রাডার স্টেশনের সরঞ্জামাদি সরবরাহ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মারুবিনি করপোরেশন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাপান সরকারের অনুদানে আবহাওয়া অফিসে নতুন এ ডপলার রাডার স্থাপন করা হয়েছে। ২০১৬ সালে এটি স্থাপনে কার্যক্রম শুরুর কথা থাকলেও বিভিন্ন কারণে তা পিছিয়ে যায়। মূলত ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি। ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে রাডার স্থাপনের প্রকল্পে গতি আসে। আনুষ্ঠানিকভাবে রাডার স্থাপনের কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩১ মার্চ থেকে।
জাপান সরকারের অনুদানে প্রায় ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে এটি নির্মাণ করার কথা থাকলেও পরবর্তীতে প্রকল্প ব্যয় ১৫০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। যার বেশি অংশই দিয়েছে জাপানের দাতাসংস্থা জাইকা।
নতুন রাডার স্থাপনের দায়িত্বে থাকা সিমিজু করপোরেশনের কনসালটেন্টরা জানিয়েছেন, নতুন রাডারের মাধ্যমে রংপুর আবহাওয়াকেন্দ্র থেকে চারদিকে সাড়ে ৪০০ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়, মেঘের গতিবিধি, বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, বজ্রপাতসহ আবহাওয়ার আগাম নানা তথ্য দেওয়া সম্ভব হবে। দুর্যোগের বেশ কয়েক ঘণ্টা আগে তথ্য পাওয়ায় সংশ্লিষ্টদের সঠিকভাবে পূর্বাভাস দেওয়া যাবে। কালবৈশাখী মেঘের অস্তিত্ব, টর্নেডোর মেঘ, বজ্রপাতের ধরণ বলে দিতে পারবে এই রাডার।
নতুন এ রাডার স্টেশন চালু হলে মেঘের অবস্থান, গতি, দিক, তাপমাত্রা জানতে পারব। বজ্রপাতের পূর্বাভাস দেওয়ার মাধ্যমে মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব হবে। রেডজোনে অবস্থিত রংপুরে ভূমিকম্প ও বড় ধরনের বন্যার তথ্য দেওয়া যাবে। আগাম বৃষ্টিপাতের তথ্য দেওয়ার মাধ্যমে কৃষকদের ফসলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করা যাবে। সেই সঙ্গে রংপুরের আবহাওয়ার অবস্থা ও পরিবর্তনজনিত কারণগুলো গবেষণা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে-যোগ করেন আবহাওয়া কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে রংপুর আবহাওয়া, রাডার ও ভূ-কম্পন পর্যবেক্ষণাগারের কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নতুন স্থাপিত ডপলার রাডারের মেয়াদকাল ১৫ বছর। নতুন এই রাডারটি উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি কৃষির সঙ্গে জড়িত। প্রতি বছর খরা, বন্যা, অতিবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আমাদের কোটি কোটি টাকার ফসলহানি হয়। বজ্রপাতের কারণে দিন দিন মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চলছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস না থাকায় মৌসুমি রোগব্যাধিও বাড়ছে।
প্রধান অতিথি ও বাংলাদেশ আবহাওয়া বিভাগের পরিচালক মোমিনুল ইসলাম জানান, নতুন রাডারের মাধ্যমে রংপুর আবহাওয়া কেন্দ্র থেকে চারদিকে সাড়ে ৪শ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়, মেঘের গতিবিধি, বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, বজ্রপাতসহ আবহাওয়ার আগাম নানা তথ্য দেওয়া সম্ভব হবে। কালবৈশাখী মেঘের অস্তিত্ব, টর্নেডোর মেঘ ও বজ্রপাতের ধরণ বলে দিতে পারবে এই রাডার।
এদিকে রাডার স্টেশনটি চালু হওয়ায় খুশি রংপুরের সর্বস্তরের মানুষ। আবহাওয়ার তথ্য সঠিক সময়ে দেওয়ার আহ্বান তাদের।নতুন এ রাডারের মাধ্যমে মেঘের অবস্থান, গতি, দিক, তাপমাত্রা জানা যাবে। বজ্রপাতের পূর্বাভাস দেওয়ার মাধ্যমে মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব হবে। রেডজোনে অবস্থিত রংপুরে ভূমিকম্প ও বড় ধরনের বন্যার তথ্য মিলবে। আগাম বৃষ্টিপাতের তথ্য দেওয়ার মাধ্যমে কৃষকরা ফসলের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবেন। সেইসঙ্গে রংপুরের আবহাওয়ার অবস্থা ও পরিবর্তনজনিত কারণগুলো গবেষণা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে।রংপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, রংপুর নগরীর কলেজ রোড মাস্টারপাড়া
নতুন রাডার স্থাপনের দায়িত্বে থাকা বিদেশি জাপানের আন্তর্জাতিক পরামর্শক ইয়োশিহিসা উচিদা জানান, দুর্যোগের বেশ কয়েক ঘণ্টা আগে তথ্য পাওয়ায় সংশ্লিষ্টদের সঠিকভাবে পূর্বাভাস দেওয়া যাবে। আর এটি দীর্ঘ বছর ধরে সেবা দিতে সক্ষম হবে।
মন্তব্য (০)