
রংপুর ব্যুরোঃ রংপুরের কালবৈশাখী ঝড় ও বৃষ্টি হয়েছে। কয়েকদিন থেকে চলা তাপদাহের মাঝে ঝড় বৃষ্টিতে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে নগরবাসী।তবে তার আগে হঠাৎ ধুলা ঝড়ের কারণে অস্বস্তিতে পড়ে নগরবাসী।
অন্যদিকে রংপুরে কালবৈশাখী ঝড়ে গাছচাপায় মোফাজ্জল হোসেন (৬০) নামে এক অটোচালকের মৃত্যু হয়েছে।নিহত অটোচালক কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ পৌরসভার হকবাজার নয়াটারি এলাকার মৃত আসান উল্লার ছেলে।
রোববার(২৭এপ্রিল)দুপুরে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে হারাগাছ পৌরসভার সহকারী কর আদায়কারী শোয়েব দুলাল জানান।
গতকাল শনিবার রাতে ঝড়ের সময় ওই ব্যক্তি আটোরিকশা দেখার জন্য ঘর থেকে বের হন।এসময় একটি খেঁজুর গাছ ভেঙে আম গাছের ওপর পড়ে। পরে আম গাছটি তার ওপরে পড়লে তিনি গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
তিনি আরও জানান, কালবৈশাখী ঝড়ে হারাগাছ পৌর এলাকার মিয়াপাড়া গ্রামের এক খামারির একটি গরু মারা গেছে। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় ঘর-বাড়ির পাশাপাশি গাছগাছালি এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
রংপুর নগরীর বখতিয়ারপুর এলাকার সুজেল খানের ১২টি লিচু গাছ ও দুই সুপারি গাছ উপড়ে পড়েছে। এছাড়া একটি টিনের চালা উড়ে গেছে। তিনি বলেন, ঝড়ে আমার স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছে।
মাহিগঞ্জ সরেয়ারতল এলাকার এম এ মজিদ জানান, তার গাছ বাগানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সাড়ে তিনশো গাছের মধ্যে অন্তত অর্ধশত গাছ ভেঙে পড়ার পাশাপাশি বসার ঘরের চাল উড়ে গেচে।
পীরগাছা উপজেলার রাজু আহমেদ জানান, তাম্বুলপুর, ছাওলা, অন্নদানগর, কান্দিসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামে গাছপালা উপড়ে পড়ে বাড়ীঘর ভেঙে গেছে।
নগরীর শাহিপাড়া এলাকায় একটি বিশাল জাম গাছ পড়ে গেছে। নগরীর রবাটসনগঞ্জ এলাকায় একটি বড় পাইকর গাছ পড়ে গিয়ে চারটি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া অনেক ¯’ানে ধান গাছ হেলে পড়েছে।
এদিকে রংপুরের মিঠাপুকুরের গোপালপুর ও খোড়াগাছ এলাকার আমচাষি আমজাদ হোসেন,বেলাল হোসেন, বাকের আলী, অনিছুল ইসলাম,রবিউল ইসলাম আবদুস ছালাম জানান, ঝড়ে তাদের আম বাগানের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। এবার কাঙ্খিত ফলন না পাওয়ার শঙ্কা তাদের।
ঝড়ের সময় চলে যায় বিদ্যুৎ।অন্ধকারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে জনমনে। থমকে যায় নগরীর স্বাভাবিক জীবন। দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়, বিছিন্ন হয়ে পড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ। অন্ধকারে ঢাকা পড়ে পুরো শহর। ঝড়ের তান্ডবে শহরের মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়। কালবৈশাখীর এই তান্ডবে রংপুর মহানগরীর জিএল রায় রোড, স্টেশন রোড, কাচারি বাজার, নিউ ইঞ্জিনিয়ারপাড়াসহ আশপাশ এলাকায় কয়েকটি গাছ উপড়ে পড়েছে।
এদিকে শনিবার রাতে ঝড়ো হাওয়া ও শিলাবৃষ্টিতে জেলার গঙ্গাচড়া,কাউনিয়া,তারাগঞ্জ বরদগঞ্জ, পীরগাছাসহ সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।বিশেষ করে কালবৈশাখী ঝড়ের তান্ডবে ঘর-বাড়ি,গাছপালা ভেঙে পড়ার পাশাপাশি আম, লিচু, উঠতি বোরো ধান, পাট ও ভুট্টার ক্ষতি হয়েছে। একইসঙ্গে গাছপালাসহ বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ায় এখনো বিদ্যুৎবি”িছন্ন অধিকাংশ এলাকা।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, মাঠ পর্যায়ে কাজ করেছি। ঝড়ে তেমন ক্ষতি হয়নি। কোথাও কোথাও ধানগাছ হেলে পড়েছে।
রংপুর পাওয়ার গ্রিডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হোসাইন মোহাম্মদ ইশতিয়াক বলেন,শনিবারের ঝড়ে রংপুরে নেসকোর এলাকাসহ পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন এলাকা গুলোতে বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ার পাশাপাশি তার ছিঁড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ বিছিন্ন আছে।নেসকো আওতাধীন বেশিরভাগ লাইন সচল হলেও পল্লী বিদ্যুতের লাইনগুলো শতভাগ সচল হতে আরও কিছু সময় লাগবে। তবে আজ সবগুলো লাইন সচল করতে কাজ চলছে।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গতরাতে বৃষ্টিপাত হয়েছে ২০ মিলিমিটার।বাতাসের গতিবেগ ছিল ৮ নটিক্যাল মাইল।বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল বলেন, কালবৈশাখীতে কোথায় কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে,তা নিয়ে জনপ্রতিনিধির পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তারাও মাঠে কাজ করছেন।অতিদ্রুত ভুট্রা ধান কি পরিমান ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা দেখা হচ্ছে।
মন্তব্য (০)