• উদ্যোক্তা খবর

চাটমোহরে নারী উদ্যোক্তা হাসনা হেনার থমকে যাওয়া জীবন আজ গতিশীল

  • উদ্যোক্তা খবর
  • ০৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২১ ১২:৪০:৪২

ছবিঃ সিএনআই

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি : ১৯৯০ সালে যখন আমি নবম শ্রেণীর ছাত্রী ঠিক তখনই পাবনার চাটমোহর উপজেলার ধরইল গ্রামের ফিরোজ কবীরের সাথে আমার বিয়ে হয়ে যায়। ভেবেছিলাম জীবনের সব স্বপ্নই বুঝি মিথ্যে হয়ে গেল। আর বোধ হয় এগুতে পারবো না,এমন দুশ্চিন্তা প্রায়শই আমাকে গ্রাস করতো। আমি এস এস সি পাশ করার পর বড় ছেলে তুষারের জন্ম হয়। পরিবারের সহায়তা পেলে একটা থমকে যাওয়া জীবনও যে আবার গতিশীল হতে পারে হয়তো আমি তারই দৃষ্টান্ত। পাবনার চাটমোহরের একজন নারী উদ্যোক্তা প্রভাষক হাসনা হেনা কথাগুলো বলার সময় হয়তো চলে গিয়েছিলেন তার সেই ফেলে আসা সুদুর অতীতে।

চাটমোহর পৌরসদরের ৭নং ওয়ার্ডের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত প্রডেস হোম ডেকর নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করেছেন এই নারী উদ্যোক্তা। এখানে কাঠের তৈরি খাট, আলমীরা, সোফা, দরজা, ডেসিন, আলনা,ওয়াল ফার্নিচার, কমফোর্টার, সোফার ফোম, কভার, বিছানার চাদর, দরজা-জানালার পর্দা, পা- পোশ, ফ্লোরম্যাটসহ গৃহসজ্জার যাবতীয় জিনিষ বিক্রি করেন তিনি। চাটমোহরের মতো ছোট শহরে (মফস্বল এলাকা) নারীরা এখনও যখন গৃহমুখী ঠিক এমন সময় হাসনা হেনার এ উদ্যোগ প্রশংসার দাবী রাখে বটে।

হাসনা হেনা দৈনিক তৃতীয় মাত্রা জানান, খুব অল্প বয়সে, নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় যখন আমার বিয়ে হয়ে যায় তখন সমাজ সংসার সম্পর্কে আমার খুব ভাল বেশি একটা ধারণা ছিল না। কিন্তু আমি বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। বিয়ের পর শ্বশুর বাড়িতে চলে যাই। কিন্তু পড়া লেখা ছাড়িনি। বিয়ের পর ১৯৯২ সালে উপজেলার হরিপুর দূর্গাদাস স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এস এস সি, ১৯৯৪ সালে চাটমোহর ডিগ্রী কলেজ থেকে এইচ এস সি, ২০০০ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধীনে সরকারী আজিজুল হক কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন, ২০০৯ সালে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে মাস্টার্স পাশ করি।

এর মধ্যেই আমি দুই ছেলের মা হয়ে যাই। কর্মজীবনে ২০০৩ সালে চাটমোহরের এনায়েতুল্লাহ ইসলামীয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদরাসার সহকারী গ্রন্থাগারিক পদে যোগদান করি। এর পর ২০১১ সালে সেন্ট রিটার্স উচ্চবিদ্যালয়ে একই পদে যোগদান করি। সব শেষে ২০১৫ সালে চাটমোহর মহিলা ডিগ্রী কলেজে ইসলামের ইতিহাস বিষয়ের প্রভাষক পদে যোগদান করি। ২০১৯ সালে এমপিও ভূক্ত হওয়ার পর ২০২০ সালে নিজেদের বাড়ির সামনের অংশে স্বামী -সন্তানের সহায়তায় প্রডেস হোম ডেকর নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করি। এতে এক দিকে লাভ পাচ্ছি অন্যদিকে অবসর সময় কাটাতে পারছি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে।

এই ভেবে ভাল লাগে যে আমার এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ৯ জন শ্রমিকের (মিস্ত্রী) এর কর্মসংস্থান হয়েছে। এতে এদের পরিবারে বাবা-মা, স্ত্রী সন্তান নিয়ে বেশ ভাল ভাবে কেটে যাচ্ছে তাদের সংসার। ঢাকার যে মালামাল বিক্রি করি অনলাইনে সেগুলির অর্ডার দেই।

এ ব্যাপারে চাটমোহর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাষক ফিরোজা পারভীন জানান, ছোট বেলা থেকেই হাসনা হেনাকে খুব চিনি ও জানি। খুব অল্প বয়সে তার বিয়ে হয়ে যায়। সব সময় তার মধ্যে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখার ইচ্ছা পোষন করতো সে। তাই কোন বাধাই তাকে দমাতে পারে নি। সংসারে পড়ালেখা সন্তান সামলানো এক সাথে সবই করতে হয়েছে তাকে। আজ সে একজন সফল উদ্যোক্তা। এ দৃষ্টান্ত অন্যদের মধ্যে অনুপ্রাণীত করবে।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo