• বিশেষ প্রতিবেদন

তেঁতুলিয়ায় মুজিববর্ষের উপহার ১৪২ গৃহহীন পাচ্ছেন ঘর

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ২০ জানুয়ারী, ২০২১ ১২:২৭:৩২

ছবিঃ সিএনআই

তেঁতুলিয়া প্রতিনিধিঃ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণ করতে চলেছেন তার সুযোগ্যকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় যাদের জমি নেই ও ঘরও নেই, সেইসব গৃহহীনদের জন্য মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ১৪২টি পরিবারকে দেয়া হচ্ছে আশ্রয়ণের নতুন ঘর।

প্রত্যাশিত স্বপ্নের নতুন ঠিকানা হচ্ছে এসব গৃহহীনদের। যাদের জমি এবং ঘর নেই- স্থানীয় প্রশাসনের তত্বাবধানে তাদেরকে এসব ঘর দেওয়া হবে। চলতি মাসেই গৃহহীনদের মাঝে এসব নির্মিত নতুন ঘর হস্তান্তর করার কথা রয়েছে।

উপজেলা প্রশাসনের তথ্যানুযায়ী, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে দেশের উত্তরের সীমান্তবর্তী উপজেলা তেঁতুলিয়ায় ‘জমিও নেই বাড়িও নেই’ এমন গৃহহীন পরিবারদের প্রাথমিক পর্যায়ে সেমি পাকা বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে।

সদর ইউনিয়নের ঈদগাহ, রনচন্ডী, শালবাহান, মাগুরমারী, তিরনইহাট ইউনিয়নের রওশনপুর, বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের কাশিমগঞ্জ, দেবনগর ইউনিয়নের ঝালেঙ্গি ও বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের মনিকোসহ বেশ কয়েকটি স্থানে আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের নির্মিত হচ্ছে নতুন ঘর। আশ্রয়ণ প্রকল্পের এসব নির্মাণের কাজগুলো চলমান দেখতে পাওয়া যায়। সরকারিভাবে প্রতিটি সেমি পাকা ঘর নির্মাণে বরাদ্দ করা হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। প্রতিটি পাকা ঘরে থাকছে দুটি কক্ষ, রান্নাঘর, বারান্দা, শৌচাগার। সুপেয় পানির জন্য থাকছে প্রতি দুটি পরিবারের জন্য একটি নলকূপ।

এদিকে ১৪২টি ঘরের মধ্যে ৩২টি ঘর নির্মাণের জায়গা দান করেছেন রনচন্ডী এলাকার আব্দুল মালেক নামের এক বীর মুক্তিযোদ্ধা। উপজেলা প্রশাসন জানায়, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের উপজেলায় বাড়ি তৈরির উপযোগী প্রয়োজনীয় পরিমাণ খাসজমি পাওয়া যাচ্ছিল না। বিষয়টি জানতে পেরে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মালেক জমি দান করার প্রস্তাব দেন। পরে নিজের ১০ একর জমির মধ্য থেকে এক একর সরকারকে দান করেন।

তাঁর জমিতেই ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে ৩২টি দুই কক্ষবিশিষ্ট সেমি পাকাঘর। এমনকি এই নবনির্মিত এই বাড়িগুলোতে যাতায়াতের জন্য রাস্তা তৈরিতেও তিনি দান করেছেন নিজের জমি। বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেকের এই মহানুভবতার সম্মানে ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের নাম ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা মালেক নগর গুচ্ছগ্রাম’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পঞ্চগড়-১ আসনের সাংসদ মজাহারুল হক প্রধান ও তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রশাসন।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রনচন্ডীর বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেকের আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের দেয়া এক একর জমির ৯০ শতক জমিতে ৩২টি সেমি পাকা ঘরের নির্মাণ কাজ চলতে দেখা যায়। বাড়িগুলোতে যাতায়াতের জন্য ১৫ শতক জমি মাটি কেটে রাস্তা তৈরিতে কাজ করছে একদল নারী শ্রমিক। গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণের জন্য সরকারকে জমি দেয়ার বিষয়ে ওই বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেকের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, দেশ স্বাধীনের জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছি।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে মনে প্রাণে ও তার আদর্শ লালন করি। উপজেলা প্রশাসন যখন এখানে গুচ্ছগ্রামের জন্য জমি খুঁজছিলেন কিন্তু পাচ্ছিলেন না, আমি তা জেনে মনে হয়েছে, গৃহহীনদের জন্য আমারও কিছু করার রয়েছে। তাই নিজে থেকেই এক একরের বেশি জমি দান করেছি। এতে যদি গৃহহীনদের আশ্রয় হয়, তাদের মুখে হাসি ফুটে, এতেই আমার সার্থকতা।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, মুজিব বর্ষের উপহার হিসেবে ১৪২টি পরিবার নতুন ঘর পাচ্ছে। ঘরগুলো নির্মাধীন। আশা করছি আশ্রয়ণ প্রকল্প-এর নির্মিত এসব ঘর এ মাসেই গৃহহীনদের হস্তান্তর করতে পারবো। আরেকটি আশার কথা যে, ১৪২টি ঘরের মধ্যে ৩২টি গৃহহীন পরিবারদের জন্য ঘর নির্মাণের জন্য এক একরেরও বেশি জমি দান করেছেন রনচন্ডী এলাকার আব্দুল মালেক নামের এক বীর মুক্তিযোদ্ধা।

‘আমরা যখন ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য বাড়ি নির্মাণের জমি খুঁজছিলাম, তখন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মালেক নিজ তাগিদেই জমি দান করবেন বলে আমাদের জানান। উনার উদারতায় সত্যিই আমরা মুগ্ধ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও দেশের প্রতি যে তাঁর নিখাঁদ ভালবাসা তা সত্যিই প্রশংসনীয়।’তার নামানুসারেই ওই গুচ্ছগ্রামের নাম হচ্ছে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা মালেক নগর গুচ্ছগ্রাম’।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo