• অপরাধ ও দুর্নীতি

কেরু কোম্পানির ১৯৭ কোটি টাকা গেল কোথায়?

  • অপরাধ ও দুর্নীতি
  • ৩১ আগস্ট, ২০১৯ ২১:২৯:২৩

১৯৭ কোটি টাকা কৃষিঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে চলছে চুয়াডাঙ্গার একমাত্র ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান দর্শনা কেরু চিনিকল। দর্শনা জনতা ব্যাংক শাখা থেকে এ ঋণ নেওয়া হয়েছে। তবে এ টাকা কেরুর নিজস্ব কোনো খাতে ব্যবহার হয়নি। অথচ এ ঋণের বিপরীতে প্রতিবছর কেরু চিনিকল কর্তৃপক্ষকে ১৭ কোটি টাকার সুদ গুনতে হচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেরু অ্যান্ড কোম্পানির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহেদ আলী আনছারী। তিনি জানান, সাবেক খাদ্য ও চিনিশিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান এ কে এম দেলোয়ার হোসেন দায়িত্বে থাকার সময় প্রায় তিন বছর আগে চাষিদের কৃষিঋণের নামে ১৯৭ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নেওয়া হয়। তবে এ ঋণের টাকা কেরু অ্যান্ড কোম্পানির কোনো খাতেই ব্যয় হয়নি। অথচ প্রতি বছরে ওই ঋণের ১৭ কোটি টাকার সুদ পরিশোধ করতে আমাদের। আর মূলধনের টাকা তো রয়েছেই। কেরু’র একাধিক সূত্র জানায়, পুরোনো যন্ত্রপাতি ও আখের অভাবে প্রতি বছরই এ চিনিকলটি কোটি কোটি টাকার লোকসান গুনে থাকে। তবে চিনি উৎপাদন বিভাগে লোকসান গুনলেও ডিস্টিলারি বিভাগ তা পুষিয়ে দেয়। লাভ-লোকসানের এই দোলাচলের মধ্যেই চিনিকলের কৃষকদের কৃষি ঋণ দেওয়ার নামে সাবেক খাদ্য ও চিনিশিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান এ কে এম দেলোয়ার হোসেন জনতা ব্যাংক দর্শনা শাখা থেকে ১৯৭ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। আর এতে বন্ধক রাখা হয় কেরু অ্যান্ড কোম্পানির নিজস্ব সম্পত্তি। তবে এ ঋণের একটি টাকাও দর্শনা কেরু চিনিকলের কর্মকর্তা, শ্রমিক-কর্মচারী কিংবা দিন হাজিরার শ্রমিকরাও পর্যন্ত ভোগ করেনি। অথচ এই ঋণের বিপরীতে প্রতিবছর কেরু চিনিকল কর্তৃপক্ষকেই সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে ১৭ কোটি টাকা। নিজেদের নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেরু অ্যান্ড কোম্পানির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ঋণ করা হয়েছিল সাবেক খাদ্য ও চিনিশিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান এ কে এম দেলোয়ার হোসেনের আমলে। ঋণের টাকা বিতরণে আছে বিস্তর অভিযোগও। কীভাবে এই ঋণ বিতরণ করা হলো আর কোন কোন প্রতিষ্ঠানের চাষিরা ঋণ পেল তার কোনো হিসাব বা তথ্য নেই কেরু কর্তৃপক্ষের নিকট। অথচ সম্পূর্ণ দায়ভার বহন করতে হয়েছে কেরু কর্তৃপক্ষকেই। এ ঋণ এখন কেরু কর্তৃপক্ষের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শনিবার শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার কেরু অ্যান্ড কোম্পানি পরিদর্শন শেষে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় মন্ত্রী বলেন, ১৯৭ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করে কিছু টাকা অন্য চিনিকলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে বলে শুনেছি। বাকি টাকা কোন কোন খাতে ব্যয় করা হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ জন্যই আমরা পরিদর্শনে এসেছি। এ সময় প্রতিমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা আর কোনো প্রতিষ্ঠানকে লুটপাটের হাতিয়ার বানাতে দেব না। কাজ না করে বসে বসে বেতন-ভাতা নেবেন সেই দিন শেষ হতে চলেছে। শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, বর্তমান সরকার উন্নয়নে বিশ্বাসী। তাই শুধু কেরু অ্যান্ড কোম্পানি নয়, দেশের সব চিনিকল আধুনিকায়নের কাজ শুরু করেছি। মন্ত্রী এ সময় বলেন, আমরা প্রতিশ্রুতির ভেতরে আবদ্ধ হতে চাই না, তার বাস্তবায়ন ঘটাতে চাই। খুব শিগগিরই তা দেখতেও পাবেন। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের চিনিকলগুলোয় সাধারণত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজ হয় মাত্র তিন মাসের। অথচ বাকি মাসগুলো তাদের বসিয়ে রেখে বেতন-ভাতা গুনতে হয়। এর থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজছি আমরা। এ সময় আরো ছিলেন, চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলাইমান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন, ২ আসনের সংসদ সদস্য হাজী আলী আজগর টগর, খাদ্য ও চিনি শিল্প করপোরেশন চেয়ারম্যান অজিত কুমার পাল, জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার ও পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান। এর আগে দুপুরে মন্ত্রী কেরু চত্বরে বৃক্ষরোপণ করেন। বাংলাদেশ শিল্প স্থাপনাগুলোর মধ্যে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা কেরু অ্যান্ড কম্পানি (বাংলাদেশ) লি. একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম শুরু হয়। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান বয়স ৮১ বছর। প্রাথমিকভাবে এই চিনিকল দৈনিক ১ হাজার টন আখমাড়াই করার মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হয়। দেশ স্বাধীনের পর প্রতিষ্ঠানটিকে জাতীয়করণ করা হয়। আর তখন থেকে আজ অবধি কেরু অ্যান্ড কোং বাংলাদেশ নামে বাংলাদেশ সুগার অ্যান্ড ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের অধীনে পরিচালিত হয়ে আসছে। চিনি, রেকটিফাইড স্পিরিট, জিন, হুইস্কি, রাম, ভদকা ও ভিনেগার শিল্পপ্রতিষ্ঠানটির উৎপাদিত ম‚ল পণ্য। অপরদিকে, চিটাগুড়, ব্যাগাস ও প্রেসমাড অন্যতম উপজাত দ্রব্য। এ প্রতিষ্ঠানটি শুধু চিনি উৎপাদন ও মদ তৈরিতে সীমাবদ্ধ থাকে না। জেলার আর্থ সামাজিক উন্নয়নেও বিশেষ অবদান রেখে চলেছে।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo