• অর্থনীতি

জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসার আভাস দিলো বিশ্বব‍্যাংক

  • অর্থনীতি
  • ০৩ অক্টোবর, ২০২৩ ১৯:০৮:০৩

ছবিঃ সংগৃহীত

নিউজ ডেস্কঃ চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব‍্যাংক। এর আগে গত এপ্রিল মাসে বিশ্বব‍্যাংক বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির ৬ দশমিক ২ শতাংশ হবে বলে জানিয়েছিল।

সেই সঙ্গে চার ধরনের প্রধান চ্যালেঞ্জ রয়েছে দেশের অর্থনীতিতে। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসে এসব তথ্য উঠে এসেছে। 

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংক কার্যালয়ে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশিত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সেই সঙ্গে দিল্লি থেকে প্রকাশ করা হয়েছে সাউথ এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আপডেট প্রতিবেদন।

প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক। এ ছাড়া চিফ ইকোনমিস্ট বানার্ড হ্যাভেন, ইকোনমিস্ট নাজমুস সাদাত খান এবং যোগাযোগ বিভাগের প্রধান মেহেরিন এ মাহবুব উপস্থিত ছিলেন।

বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক বলেন, বাংলাদেশের অগ্রগতি বহুমাত্রিক অগ্রগতি অর্জন করেছে। সামাজিক অনেক ক্ষেত্রে উন্নত হয়েছে। বিশেষ করে দারিদ্র্য হ্রাসে অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য। তবে গ্রামে কিছুটা বৈষম্য কমলেও শহরে বৈষম্য বেড়েছে। বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে হবে। চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় এখনই নীতি সহায়তা এবং সংস্কার কার্যক্রমগুলো এগিয়ে নেওয়া দরকার। এ ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক সহায়তা দিতে প্রস্তুত। 

তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি। ফলে গরিব মানুষের ভোগ কমেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খেলাপি ঋণের হার বাংলাদেশে অনেক বেশি। এটি কমাতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। 

চার চ্যালেঞ্জ
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো হচ্ছে— মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির চাপ, আর্থিক খাতের দুর্বলতা এবং অনিশ্চয়তা। তবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে প্রবৃদ্ধি বাড়তে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

ঝুঁকি হিসাবে বলা হয়েছে, নির্বাচনি অর্থবছর হওয়ায় অনিশ্চয়তা রয়েছে, মুদ্রাবিনিময় হার, দেশি ও আন্তর্জাতিকভাবে জিনিসপত্রের দাম বাজার মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি রয়েছে।

প্রতিবেদনে এশিয়ার অবস্থা তুলে ধরে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছর বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। এ ছাড়া ভারতের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। ভুটানের ৪ শতাংশ, নেপালের ৩ দশমিক ৯ শতাংশ এবং পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি হতে পারে এক দশমিক ৭ শতাংশ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০১৬-২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য হারে দারিদ্র্য কমেছে। দারিদ্র্যের হার প্রতিবছর এক দশমিক ৩ শতাংশ পয়েন্ট হারে কমেছে। চরম দারিদ্র্যের হার কমেছে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ পয়েন্ট হারে। বাংলাদেশ শিশু-মৃত্যু, মাতৃমৃত্যু, বিদ্যুৎ সুবিধা, স্যানিটেশন ও শিক্ষাসহ সুস্থতার অন্যান্য বিষয়ে ভালো করেছে। 

আরও বলা হয়েছে, গ্রামীণ এলাকায় দারিদ্র্যের হার ২৯ দশমিক এক শতাংশ থেকে ২০ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে। এ ছাড়া শহর এলাকায় ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ। দেশে নবায়ন ত্বরান্বিত হচ্ছে। তবে ব্যাপক বৈষম্য বেড়েছে। উচ্চ নগরায়ণের ফলে বৈষম্যকে বাড়িয়ে দিচ্ছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, কম আমদানির ফলে রাজস্ব আদায়ও কম হচ্ছে। দুর্বল রাজস্ব আদায় ঘাটতি আনুমানিক ৫ দশমিক ৩ শতাংশ হয়েছে। বাণিজ্য সম্পর্কিত এবং আয়কর আদায় কম হচ্ছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আর্থিক খাতের দুর্বলতা আরও গভীর হয়েছে। ২০২২ সালের মে মাস থেকে রৌপ্য হার ১৭৫ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধির সঙ্গে মুদ্রানীতির কঠোরতা অব্যাহত আছে। ঋণের সুদের হারের সীমাবদ্ধতার কারণে মুদ্রানীতির ট্রান্সমিশন ব্যাহত হচ্ছে। খেলাপি ঋণ বাড়ছে। এসব সমস্যা সমাধানে নজর দিতে হবে।

প্রতিবেদনে পরামর্শ দিয়ে বলা হয়েছে, সুদের হারের সীমা তুলে দিতে হবে। মুদ্রাবিনিময় হার একটি করতে হবে। অত্যাবশ্যকীয় আমদানির ওপর শুল্ক কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোকে তাদের ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করতে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। খেলাপি ঋণ কমাতে হবে।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo