• অর্থনীতি

শেয়ারবাজারে সূচক-লেনদেন বাড়ছে, তবু কাটছে না দুশ্চিন্তা

  • অর্থনীতি
  • ৩১ আগস্ট, ২০২৩ ১৭:২৭:৪৭

ছবিঃ সংগৃহীত

নিউজ ডেস্কঃ পতন কাটিয়ে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফেরার আভাস দিচ্ছে শেয়ারবাজার। গত কয়েক কার্যদিবস ধরে শেয়ারবাজারে মূল্যসূচক ঊর্ধ্বমুখী ধারায় রয়েছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের গতি। এরপরও বিনিয়োগকারীদের দুশ্চিন্তা কাটছে না।

এর কারণ হিসেবে বিনিয়োগকারীরা বলছেন, এখনো তালিকাভুক্ত প্রায় অর্ধেক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম ফ্লোরপ্রাইজে আটকে রয়েছে। দিনের পর দিন এসব প্রতিষ্ঠানের ক্রেতা মিলছে না। কিছু প্রতিষ্ঠান ভালো লভ্যাংশ দিচ্ছে তারপরও ক্রেতার দেখা মিলছে না।

তারা বলছেন, তালিকাভুক্ত অর্ধেক প্রতিষ্ঠানের ক্রেতা সংকট থাকার পাশাপাশি, সাম্প্রতিক সময়ে শেয়ারবাজারে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা গেছে। বড় ধরনের সংঘাত দেখা না দিলেও সামনে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন থাকবে, তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না। সবকিছু মিলেই শেয়ারবাজার সামনে কোন দিকে যাবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।

সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্যসূচক বেড়েছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ।

এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে চার কার্যদিবস শেয়ারবাজারে ঊর্শেধ্বমুখীতার দেখা মিললো। আর শেষ ছয় কার্যদিবসের মধ্যে পাঁচ কার্যদিবস ঊর্ধ্বমুখী থাকলো শেয়ারবাজার।

অবশ্য এর আগে নানান গুজবে শেয়ারবাজারে টানা দরপতন দেখা দেয়। সেইসঙ্গে দেখা দেয় লেনদেন খরা। ডিএসইতে লেনদেন কমে ২০০ কোটি টাকার ঘরে নেমে যায়। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়।

তবে গত কয়েক কার্যদিবসে সূচক ও লেনদেনের গতি বাড়ায় বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক কিছুটা কমেছে। তবে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভর করা দুশ্চিন্তা পুরোপুরি কাটেননি।

এ বিষয়ে বিনিয়োগকারী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কয়েকদিন ধরে শেয়ারবাজার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। এতে ভালো লাগছে। তবে বাজার পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি ভালো হয়নি। অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম ফ্লোরপ্রাইসে আটকে রয়েছে।

তিনি বলেন, গুটি কয়েক কোম্পানির শেয়ার এখন বাজারে লেনদেন হচ্ছে। তাছাড়া বাজারে এখন কোনো ধারাবাহিকতা নেই। হুট করে আবার কখন পতন শুরু হয়ে যায় বলা মুশকিল। বাজারের আচরণ এখন বোঝা কঠিন।

আর এক বিনিয়োগকারী মো. ফিরোজ বলেন, সূচক ঊর্ধ্বমুখী আছে, কিন্তু বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম মুভ করছে না। কিছু মিউচুয়াল ফান্ড ভালো লভ্যাংশ দিয়েছে, এরপর দাম ফ্লোরপ্রাইসে আটকে আছে। ৫ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়া মিউচুয়াল ফান্ডের দাম এখন পাঁচ টাকা। আবার নিয়মিত বড় লভ্যাংশ দেওয়া প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দামও ফ্লোরপ্রাইসে আটকে আছে। এটাকে ভালো শেয়ারবাজার বলা যায় না।

তিনি বলেন, এখন বাজারে গুটি কয়েক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম হু হু করে বাড়ছে। এ দাম বাড়ানোর পেছনে বিশেষ চক্র রয়েছে। এ চক্র কখন কাকে কোন শেয়ার ধরিয়ে দেয় বলা মুশকিল। সাম্প্রতিক সময়ে বাজার যে আচরণ করেছে, তাতে নতুন করে বিনিয়োগ করতে ভয় লাগে। বাজারে সহসা সুস্থ পরিবেশ ফিরবে বলে মনে হচ্ছে না।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার মাধ্যমে। এতে লেনদেনের শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখীর দেখা মিলে। লেনদেনের শেষপর্যন্ত সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকে।

তবে লেনদেনের শুরুর তুলনায় শেষে দাম বাড়ার তালিকা ছোট হয়। এরপরও দাম বাড়ার তালিকায় বড় থাকে। এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে ৮৭ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৬৭টির। আর ১৬৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৬ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২৯৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ১ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৭২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৪১ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

সবকটি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের গতিও বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪৫৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৪১৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ৪২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।

গত কয়েক কার্যদিবসের মতো লেনদেনের শীর্ষ স্থানটি ধরে রেখেছে ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার। কোম্পানিটির ৫৭ কোটি ৪১ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইস্টার্ণ হাউজিংয়ের ৩২ কোটি ১৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২০ কোটি ৯৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে রূপালী লাইফ ইনস্যুরেন্স।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- সোনালী পেপার, এমারেল্ড অয়েল, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, আরডি ফুড, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, জেমিনি সি ফুড এবং ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১৮ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৪৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫১টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪০টির এবং ৫৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১৬ কোটি ১০ লাখ টাকা।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo