• সমগ্র বাংলা

কুড়িগ্রামে ৩০ কোটি টাকার সাবমেরিন ক্যাবল তার হুমকিতে, বিদ্যুৎ বিছিন্ন আড়াই হাজার গ্রাহক

  • সমগ্র বাংলা
  • ১৭ আগস্ট, ২০২৩ ১৯:৫২:৫২

ছবিঃ সিএনআই

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে চরাঞ্চলের বৈদ্যুদিক সংযোগস্থল ভেঙে গিয়ে তিন শত মিটার সাবমেরিন ক্যাবল তার নদের গর্ভে চলে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন হয়ে গত ৪দিন থেকে অন্ধকারের কবলে উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের আড়াই হাজার গ্রাহক।

এতে বিদ্যুৎ বিভাগের গাফলতির কারণে বর্তমানে হুমকির মুখে প্রায় ৩০ কোটি টাকার বৈদ্যতিক তার ও সরঞ্জামাদি। কয়েকদিনের তীব্র ভাঙনের তান্ডবে এমন ক্ষতির সম্মুখিন হতে হয়েছে ইউনিয়নটির। স্থানীয়রা বলছেন, নদে যখন পানি ছিলো না তখনি ক্যাবলের সংযোগস্থল সরিয়ে নিরাপদে নেয়ার কথা ছিলো সেই অনুযায়ী তারা গেলে ঈদে সড়কের সাইটের মাটি কেটে তার নেয়ার ব্যবস্থা করে রেখেছিল। কিন্তু ওই সময়ে তারা কাজটি না করায় সরকারের প্রায় ৩০ কোটি টাকা হুমকিতে পড়েছে। 

জানা গেছে, চিলমারী উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়ন করার লক্ষ্যে উপজেলা সদর থেকে রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের চরউদনা, নয়ারহাটের বজরা দিয়ারখাতা ও চিলমারী ইউনিয়নের শাখাহাতী এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে চিলমারী ইউনিয়নের শাখাহাতী চর এলাকায় সাবমেরিন ক্যাবলের সংযোগস্থল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় প্রায় ৩শ মিটার ক্যাবল তার মাটির নিচে চাপা পড়েছে। 

বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, রমনা ইউনিয়নের জোড়গাছ বাজার থেকে ব্রহ্মপুত্রের তলদেশ দিয়ে তিনটি লেনে প্রায় ৫ কিলোমিটার সাবমেরিন ক্যাবল তার ব্যবহার করে চিলমারী ইউনিয়নের শাখাহাতী এলাকায় এইচ পোলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছিল।   

সরেজমিন চিলমারী ইউনিয়নে গিয়ে দেখা গেছে, চলতি মৌসুমে নদী ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারন করায় এইচ  বৈদ্যুতিক খুঁটি) পোল ভাঙ্গনের মুখে পড়লে তৎক্ষনিক এলাকাবাসীর সহযোগীতায় ইউপি চেয়ারম্যান তা সরিয়ে নেয়। এইচ পোল সড়িয়ে নেয়া হলেও সংরক্ষিত রাখা তিনশ মিটার কেবল সরাতে পারেনি। তবে ক্যাবল তার উদ্ধারের কাজ চলমান রয়েছে। 

শাখাহাতী এলাকার মিন্টু মিয়া বলেন, আরও একমাস আগে এই তার গুলো টেনে নিতো তাহলে আমাদের এই তার গুলো নদির মধ্যে যায় না। আর এখন যে তার আছে সেটা টেনে আর কত দুর নিয়ে যাওয়া যাবে। গতকাল সারাদিন নদিতে ডুবে তার উদ্ধারের কাজ করে সারা রাত ব্যাথায় ঘুমাতে পারি নাই।

ক্ষোভ নিয়ে তিনি বলেন, বিদ্যুতের কর্মকর্তা যারা আছে তারা এই বিষয়টি গুরুত্ব দিলে এত বড় ক্ষতি হতো না। এত টাকার সম্পদ সরকার দিছে, এ সম্পদ বাঁচা লাগবে। এনারা কেউ কোনো পদক্ষেপ নেয়নাই । এদের ঈদের ছুটি, এছুটি, ওছুটি,  সময় নেই। একজন লেখেন ওপরে, আরেক জন অর্ডার দেয়ে না এমন কাহিনী। টাকা তো তাদের বাপের ঘরের না, সরকারের টাকা। তাদের গায়ে লাগে না বলেন আক্ষেপ করে জানান তিনি। 

মাইদুল নামে অপর একজন বলেন, জীবনে কল্পনা করিনি আমরা চরের মানুষ কারেন্ট (বিদ্যুৎ পামো) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সেই স্বপ্ন পুরন করলো কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগের চরম গাফলতির কারনে ইতি মধ্যে কয়েকটি বিদ্যুৎ খুটি নদীতে চলে গেছে এবং সংরক্ষিত সাবমেরিন কেবল গুলো নদী গর্ভে বিলিনের পথে।

বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের বারবার জানিয়েও লাভ হচ্ছেনা জানিয়ে চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, সরকার যেখানে কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করলো আর তা রক্ষার জন্য কোন উদ্যোগ না নিয়ে যেন তারা ঘুমিয়ে আছেন। 

তিনি আরো জানান, তাদের সঠিক কোন সহযোগী না পাওয়ায় স্থানীয়দের নিয়ে কেবল উদ্ধারের চেষ্টা করছি, যেনে শুনে তো সরকারের এতো টাকা ক্ষতি হতে দিতে পারি না। এদিকে কেবল উদ্ধার না হওয়ায় গত চারদিন থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়ে হাজার হাজার মানুষ।

তবে সাব মেরিন কেবল উদ্ধার করা না গেলে চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে না সেই সাথে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে বলে মন্তব্য করে পল্লী বিদ্যুৎ চিলমারী জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার ওয়াজেদুল ইসলাম বলেন, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি তবে আমাদের লোকবল কম। এই বিষয়টি আমরা স্যারকে জানিয়েছি। 

কুড়িগ্রাম লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি চিলমারী জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোস্তফা কামাল বলেন, এ বিষয়ে জিএম সাহেবের সাথে কথা বলেন।

এবিষয়ে জেনারেল ম্যানেজার মো. মহিতুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমাদের লোকজন সেখানে কাজ করছে এবং সেখানে থাকার কথা জানিয়ে বলেন, ওখানের সবকিছু এখনো আমাকে জানায়নি ডিজিএম। তবে দ্রুত সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দেন জেনারেল ম্যানেজার।

 

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo