• জাতীয়
  • লিড নিউজ

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে 'আসিয়ান'র ভূমিকায় বিশেষজ্ঞদের গুরুত্বারোপ

  • জাতীয়
  • লিড নিউজ
  • ১৭ জুন, ২০২৩ ২০:০২:৪৬

ছবিঃ সিএনআই

নিউজ ডেস্কঃ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনে চীনের সহযোগিতায় বাংলাদেশ ও মায়ানমারের সমঝোতায় প্রস্তাবিত পাইলট প্রকল্পটি সম্প্রতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিশিষ্ট নাগরিক ও বিশেষজ্ঞদের সমর্থন পেয়েছে। গত ২৯ মে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে আয়োজিত একটি সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়। সভায় আলোচকরা অভিমত ব্যক্ত করেন যে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানবিক এবং সমগ্র দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তর শান্তি ও নিরাপত্তা বিবেচনায় রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান হওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে পাইলট প্রকল্প যদিও কোনও স্থায়ী সমাধান নয়, তবে প্রাথমিক পর্যায়ে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলেই মনে করেন আলোচকরা। 

তবে প্রত্যাবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মতামত ও ইচ্ছাকে কোনওভাবে উপেক্ষা করা যাবে না। বরং তাদের স্বার্থ ও নিরাপত্তা সংরক্ষণের জন্য আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে ‘আসিয়ান’র সদস্য রাষ্ট্রগুলো বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার মতো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রের সক্রিয় ভূমিকা জরুরি বলে অভিমত আলোচকদের। সেই সঙ্গে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে এশিয়ার পরাশক্তি চীনের ভূমিকা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন-সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশকে আরও উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান তারা। 

মুসলিম ওয়ার্ল্ড রিসার্চ সেন্টার (এমডব্লিউআরসি) ও ক্যাবল নিউজ ইন্টারন্যাশনালের (সিএনআই) যৌথ উদ্যোগে গত ২৯ মে (সোমবার) মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে জি টাওয়ার হোটেলে ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রকল্পের গতি-প্রকৃতি, বৈশ্বিক সমর্থন, আসিয়ান ও অন্যান্য সংস্থার ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠান সহযোগিতায় ছিল ওআইসি স্টাডি গ্রুপ, মালায়া বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা ফোরাম। 

এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন মালয়েশিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ওআইসি স্টাডি গ্রুপের চেয়ারম্যান তানশ্রী ড. সৈয়দ হামিদ আলবার। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস-এর (বিইউপি) অতিরিক্ত ফ্যাকাল্টি ডা. শাফাত আহমদের লেখা একটি প্রতিবেদন পাঠ করেন ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মোস্তফা হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইউনিভার্সিটি অব মালায়ার অধ্যাপক ড. রোজলান এন নূর। পরিচালনায় ছিলেন এমডাব্লিউআরসি’র সভাপতি ড. ইশারফ হোসেন।

সভায় আলোচক হিসেবে অংশ নেন সেন্টার ফর ইনক্লুসিভ এশিয়ার সভাপতি কো কিং কি, মালয়েশিয়ার ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ-এর (ISIS) প্রাক্তন সিনিয়র ফেলো বান নাগারা ও মালয়েশিয়া সরকারের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত দাতো ইয়াহিয়া আব্দুল জাবার। 

এছাড়াও অংশ নিয়েছেন সিএনআই-এর চেয়ারম্যান আশফাক জামান; রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে অসামান্য ভূমিকা রেখেছে, সেটার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। এরপর তিনি পাইলট প্রকল্পের ওপর জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধির গৃহীত কর্মসূচির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বিষয়টি নিয়ে আসিয়ান’র কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক আরও কার্যকরী ভূমিকা প্রত্যাশা করেন তিনি। 

আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন এমডব্লিউআরসি’র বিশিষ্ট ফেলো অধ্যাপক দাতো বাহারুদ্দিন আহমদ, মাহসা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আব্দুল বাশার, মালয়েশিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম এবং এবিআইএম-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ফাহমি শামসুদ্দিন। 

মূল বক্তব্যে তানশ্রী ড. সৈয়দ হামিদ আলবার বলেন, ‘বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় কৌশলগতভাবে অতি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে, যার কারণে তারা বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক শক্তির নিশানা হতে পারে। এই সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারকে অবশ্যই তাদের নিরাপত্তা সম্ভাবনা এবং হুমকির বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে।’ 

রোহিঙ্গারা যখন নিজ দেশে গণহত্যার শিকার হচ্ছিল, তখন তাদের আশ্রয় দেওয়া এবং সংকট সমাধানে বৈশ্বিক কূটনীতির জন্য বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি। তার মতে, মায়ানমারের মতো দেশের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হলে আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োজন, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়; কেননা সেটার যথাযথ প্রয়োগকারী সংস্থা অপ্রতুল। এক্ষেত্রে জাতীয় আইন এবং আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর ভূমিকা সবচেয়ে জরুরি। তাই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আসিয়ান’র অংশগ্রহণ করা উচিত; পাশাপাশি অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সমর্থন দেওয়া জরুরি বলে মনে করেন তিনি।  

মায়ানমারের প্রতি রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদা রাজ্য করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সেন্টার ফর ইনক্লুসিভ এশিয়ার প্রেসিডেন্ট কো কিং কি মনে বলেন, ‘চীন হয়ত এই মুহূর্তে শান্তি প্রতিষ্ঠার মনোভাবে রয়েছে। সুতরাং আসিয়ান’র উচিত তাদের সহযোগিতায় রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসা।’ 

ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের প্রাক্তন সিনিয়র ফেলো বান নেগারা মনে করেন, বর্তমান প্রত্যাবাসন উদ্যোগটি একটি পাইলট প্রজেক্ট। ফলে এর বিরোধিতা বা শর্ত আরোপ না করে বাস্তবায়নের মাধ্যমে এর সত্যিকারের ফলাফল পর্যবেক্ষণ করা যায়। এতে আসিয়ানসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার অংশগ্রহণ জরুরি। তার মতে, এই উদ্যোগটি মায়ানমারের সঙ্গে কার্যকর সংলাপের সুযোগ সৃষ্টি করবে। হয়ত তারা কিছু প্রকাশ্যে আনতে চাইবে না। সেক্ষেত্রে রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পরামর্শও দেন তিনি। 
বিভিন্ন দেশ কীভাবে শরণার্থী সমস্যা সমাধান করেছে, এসব বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন বক্তারা। তবে রোহিঙ্গারা যে বিশ্বের অন্যান্য শরণার্থীদের চেয়ে আলাদা, সেটাও উল্লেখ করেন তারা। এক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের জন্য অনুদাননির্ভর সহায়তার বিপরীতে অর্থনৈতিক সমাধান তহবিল তৈরি করা, তাদের জমির মালিকানা ফিরিয়ে দেয়া এবং তাদের জন্য একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি বাস্তবায়ন করা যেতে পারে বলে অভিমত আলোচকদের। 

অতীতে অস্বীকার করলেও বৈশ্বিক চাপে বর্তমানে মায়ানমার সরকার স্বীকার করেছে যে, রোহিঙ্গারা তাদের দেশ থেকে এসেছে। বাংলাদেশের বারংবার দাবির পর ইতোমধ্যে তারা কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে, যা প্রতীকী অর্থে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। 

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আসিয়ান ও চীনের ভূমিকার দিকে আলোকপাত করেছেন আলোচনার অন্য সদস্যরাও। এমডব্লিউআরসি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক দাতো বাহারুদ্দিন আহমদের ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo