• অপরাধ ও দুর্নীতি

টেকনাফের আলোচিত মাদক ও মানবপাচারকারী শাকের মাঝি আটক

  • অপরাধ ও দুর্নীতি
  • ১২ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৭:৪৮:৪৯

ছবিঃ সিএনআই

জাবেদ ইকবাল চৌধুরী, কক্সবাজার  : টেকনাফের আলোচিত মাদক ও মানবপাচারকারী গ্যাং লিডার শাকের মাঝি (৪০)কে আটক করেছে পুলিশ।  এ সময় তার বাহিনীর হামলায় আহত হয় অভিযান পরিচালনা কারী টেকনাফ মডেল থানা পুলিশ টিমের সদস্য এএসআই শাখাওয়াত হোসেন। ১২ ডিসেম্বর সোমবার ভোররাত সোয়া ১ টার সময় উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড মুন্ডার ডেইল গ্রামের নিজ বাসা থেকে তাকে আটক করা হয়। আটক শাকের মাঝি স্হানীয় কবির আহমেদের ছেলে।

টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো: আবদুল হালিম জানান, "  সোমবার ভোররাতে ( ১২ ডিসেম্বর)  টেকনাফ মডেল থানার ওয়ারেন্ট তামিলকারী টিম পুলিশ পরিদর্শক ( অপারেশন) আব্দুর রাজ্জাক, এসআই নুরে আলম, এসআই হোসাইন, এএসআই সাখাওয়াত  সহ সঙ্গীয় ফোর্স অভিযান চালিয়ে (বিমানবন্দর থানার মামলা  নং-২৫(৭)২০১৫, ধারা- ২০১২)   ২০১২ সালের মানব পাচার আইনের ৭/৮ এর ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি এবং আত্মস্বীকৃত আত্মসমর্পনকারী মাদককারবারী মো: শাকের মিয়া প্রকাশ শাকের মাঝিকে গ্রেফতার করে। এ সময়  উক্ত আসামি শাকের মাঝি সন্ত্রাসী কায়দায় এএসআই মোঃ সাখাওয়াত কে লাঠি দিয়ে আঘাত করে।  

এতে এএসআই সাখাওয়াত এর ঠোট কেটে যায়। এ সময় আসামির ভাই মনু মিয়া(৪০) ও রফিকুল ইসলাম (২৯) পাশের রুম হতে বের হয়ে পুলিশের সাথে বাক বিতন্ডায় জড়িয়ে পুলিশকে আঘাত করে এবং  পরিস্থিতি অস্বাভাবিক করতে চেষ্টা করে। তারপরও অভিযানকারী টিম আসামি শাকের মাঝিকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। তিনি আরো জানান, ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ও তার দুই সহোদরসহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জনের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে এবং আহত এএসআই মো: শাখাওয়াতকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।  তার ঠোটে ৩ টি সেলাই দেয়া হয় বলেও জানান ওসি। 

"মিয়ানমারের মানব বন্ধক রেখে মাদক পাচার করতো শাকের মাঝি "

মাদকের উৎসস্থল মিয়ানমারে মাদক কারবারীরা মানুষ জিম্মি রেখে বাকীতে মাদক বিক্রি করছে এদেশীয় কারবারীদের কাছে। ঠিকমতো মাদক বিক্রির অর্থ পরিশোধ করলেই মুক্তি দেয়া হয় জিম্মিকে, অন্যতায় নেমে আসে মধ্যযুগীয় নির্যাতন।

সম্প্রতি এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যার কারণে ফের আলোচনায় আসে উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাকের মাঝি। 

সে একই ইউনিয়নের বাহারছাড়া এলাকার আলী হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে মিয়ানমার মাদক কারবারীদের হাতে বন্ধক রেখে ১ লাখ ইয়াবা  আনেন। যথা সময়ে অর্থ পরিশোধ না করায় তাকে বর্বর নির্যাতন করা হচ্ছে এবং সে শাকের মাঝি টাকা পাঠাবে বলে ভূক্তভোগী তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করছেন। মিয়ানমার থেকে তার স্ত্রী ফাতেমা খাতুনের  কাছে পাঠানো একটি ভিডিওতে এমন চিত্র দেখা যায়। 

একসময় মিয়ানমারের মাদক কারবারীরা এদেশীয় মাদক কারবারীদের লেনদেনের স্বচ্ছতার উপর ভিত্তি করে সম্পূর্ণ বাকীতে বা অর্ধেক বাকীতে মাদক বিক্রি করতো। বিভিন্ন সময় এদেশীয় কারবারীরা মাদক এনে তা বিক্রি করে অর্ধেক পরিশোধ করে কখনো সম্পূর্ণ টাকা মেরে দেয়। এসব ঘটনার পর থেকে সে দেশের কারবারীরা বাকী বিক্রি বন্ধ করে দেয়। আবার এদেশীয় কারবারীরা টাকা মেরে দেয়ার ভয়ে মিয়ানমারে অগ্রীম অর্থ লগ্নি করাও বন্ধ করে দেয়। এরকম একটি অবস্থায় মিয়ানমারের কারবারীরা সিদ্ধান্ত নেয় যে, মাদকের চালান আনার সময় ক্যাশ টাকা না দিলে ক্রেতা মিয়ানমারে তাদের নিকট কোন নিকট জনকে বন্ধক রাখবে। পরে অর্থ পরিশোধ করলে ছেড়ে দেয়া হবে। অন্যতায় মেরেফেলা হবে।

এই ঘটনার অনুসন্ধেনে নেমে এমন আরো কয়েকটি ঘটনা উঠে এসেছে। উপকূলীয় বাহারছড়া ইউনিয়নের চৌকিদার পাড়ার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে নুরুল আমিন (২২)। তার ভাই আব্দুল্লাহ জানান, তার ভাইকে মিয়ানমারে কারেন্ট জাল আনার নাম করে নিয়ে ১১ লাখ টাকার ইয়াবার চালানের বিপরীতে বন্ধক রেখে চলে আসে একই এলাকার আলী হোসাইনের ছেলে শহীদ উল্লাহ। সময় মতো অর্থ পরিশোধ না করায় তাকে নির্যাতনের একটি ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠায় সেদেশের কারবারীরা। এর পর থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তি আত্মগোপনে চলে যায়।

এর আগে গত মার্চের শুরুতে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কুতুবদিয়া পাড়ার নুরুল আমিনের ছেলে নুরুল ইসলামকে একই ভাবে মিয়ানমারে বন্ধক রেখে ১০ লাখ টাকার ইয়াবা আনার অভিযোগ রয়েছে একই এলাকার আব্দুল খলিল এবং মহেষখালী উপজেলার আবছারের বিরুদ্ধে । পরে নুরুল ইসলামকে নির্যাতনের একটি ভিডিও প্রচার পেলে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা অর্থ পরিশোধ করে তাকে ছাড়িয়ে আনেন। এদিকে বন্দিদশা থেকে এসে সে আত্মগুপনে রয়েছে বলে জানাগেছে।

এই বিষয়ে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা  (ওসি) মো: আবদুল হালিম 

জানান, " অপরাধীরা আগে পরে ঠিকই আইনের আওতায় চলে আসবেই "

উল্লখ্য, আসামি শাকের মাঝির বিরুদ্ধে মাদক, মানব পাচার, অস্ত্র সহ মোট ৪ টি মামলা রয়েছে। 

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo