• অর্থনীতি

চলনবিলে চলতি মৌসুমে প্রায় সোয়া ২ কোটি টাকার শুঁটকি মাছ বিক্রির সম্ভাবনা

  • অর্থনীতি
  • ০৭ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৮:৩২:৫২

ছবিঃ সিএনআই

পাবনা প্রতিনিধি : পাবনার ঐতিহ্যবাহী চলনবিল ও গাজনার বিল অঞ্চলের শুঁটকির চাতাল থেকে চলতি মৌসুমে প্রায় সোয়া ২ কোটি টাকার ওপরে শুঁটকি মাছ বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। এ অঞ্চলের শুটকি নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর হয়ে ভারত, দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়ে থাকে।

দেশীয় জাতের ছোট মাছ বেশি শুকানো হয়ে থাকে। বর্তমানে মাছ শুকানোর চলছে ভরা মৌসুম। জেলার চলনবিল অধ্যুষিত চাটমোহর, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া উপজেলার বিভিন্ন বিল ও নদী পাড়ে এবং সুজানগর উপজেলার গাজনার বিল পাড়ে প্রায় অর্ধশত শুঁটকির চাতাল রয়েছে।

বর্ষাকালে অপার সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি হিসেবে পরিচিত ঐতিহ্যবাহী চলনবিল। বর্ষা মৌসুমে সৌন্দর্য পিপাসুদের হাতছানি দিয়ে ডাকে তার সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্য। সৌন্দর্যের পাশাপাশি চলনবিলে রয়েছে মৎস্য ভাণ্ডার। বর্ষা মৌসুমে চলনবিলকে ঘিরেই এখানকার হাজার হাজার পারিবার মাছ ধরে তাদের জীবনজীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।

বিশেষ করে কার্তিক মাসের দিকে বর্ষার পানি চলে যাওয়ার সময় প্রচুর মাছ ধরা পড়ে। আর তখনই এই বিলের রাস্তার পাশে নদীর তীরে সুবিধা মতো স্থানে গড়ে ওঠে ছোটো, বড় বিভিন্ন ধরনের শুটকির চাতাল। চলে মাঘ মাস পর্যন্ত।

পাবনা জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলনবিল ও গাজনার বিলসহ জেলায় ৭ হাজার ৯০০ হেক্টর বিল ও জলাশয় রয়েছে। এ ছাড়া সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে জেলায় ৭ হাজার ৯৫৫ হেক্টার জমিতে ছোট বড় বিভিন্ন পুকুর রয়েছে।

এসব পুকুর ও জলাশয়ে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ মাছ উৎপাদন করা হয়েছে থাকে। বিশেষ করে চলনবিলসহ বিভিন্ন স্থানে জলাশয়ে বর্ষার মৌসুমে প্রচুর পরিমাণ দেশীয় জাতের ছোট মাছ পাওয়া যায়। এসব মাছে পাবনা অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হয়ে থাকে। বর্ষার শেষে কার্তিক মাস থেকে শুকানো হয়ে থাকে বিভিন্ন জাতের মাছ।

জেলার চাটমোহর, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া, সুজানগর উপজেলায় চলনবিল ও গাজনার বিলসহ জেলার বিভিন্ন বিল, জলাশয় ও নদীর পড়ে প্রতি বছর গড়ে উঠে ছোট বড় ৪০টি শুঁটকির চাতাল। চলতি বছর জেলায় ৪৩ হাজার মেট্রিক টন শুটকি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

পাবনা-নাটোর-সিরাজগঞ্জ জেলার প্রায় ১৬টি উপজেলার বুকজুড়ে রয়েছে দেশের অন্যতম বৃহত্তম চলনবিল। বিভিন্ন ফসলের পাশাপাশি বর্ষা মৌসুমে নানা প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। পুরো বর্ষা মৌসুমে এই চলনবিলে চলে মৎস্য শিকারিদের মাছ ধরা।

এসব বিলে ধরা পড়ছে পুটি, শোল, টাকি, মৌসি, টেংড়া, সিং, গুচি, বোয়াল, মাগুড়, কৈ, চাঁদা, খলিসা, চিতল, মৃগেল, মোয়া, বৌমাছ, গোপুয়ে, বেলেসহ (অঞ্চল ভেদে বিভিন্ন নাম রয়েছে এসব মাছের) নানান প্রজাতির মাছ রয়েছে।

আর এই মাছকে কেন্দ্র করে চলনবিল ও গাজনার বিল পাড়ের সুবিধামতো স্থানে গড়ে উঠেছে শুঁটকির চাতাল। শুঁটকির মৌসুমে এসব চাতালে শত শত শ্রমিক কাজ কারে তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করছেন।

ভাঙ্গুড়া এলাকার চাতালশ্রমিক জমির উদ্দীন বলেন, শুঁটকি মৌসুমে বিভিন্ন চাতালে চার থেকে ছয়জন বা আরও বেশি শ্রমিক কাজ করে থাকেন। এসব শ্রমিকদের মাসিক বেতন ছয় থেকে ১৫ হাজার পর্যন্ত।

চাটমোহর উপজেলার খলিশাগাড়ি বিল পাড়ের চাতাল মালিক বৃদ্ধ আবদুর রহমান বলেন, এই মৌসুমে তারা বিলপাড়ে চাতালের পাশেই অবস্থান করেন এবং মাছ ক্রয় করে শুঁটকির চাতাল করে মাছ শুকিয়ে থাকেন। এ কাজ প্রায় ২৫ বছর ধরে করছেন। তবে এবছর মাছের পরিমাণ অনেকটাই কম।

পাবনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, পাবনার চলনবিল ও গাজনার বিল এলাকায় ছোট জাতের মাছ বেশি শুঁটকি করা হয়ে থাকে। শুঁটকির মৌসুমে আমরা চাতাল মালিকদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিয়ে থাকি।

এ সময় মাছ শিকারি এবং শুঁটকি চাতালে অনেক সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। এ বছর অঞ্চল থেকে প্রতি বছর ৪৩ হাজার মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে; যার বাজার মূল্য প্রায় সোয়া ২ কোটি টাকা।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo