• অর্থনীতি

শিল্প বাঁচলে ব্যাংকের ঋণ শোধ হবেই, সেইসঙ্গে কর্মসংস্থানও নিরাপদ হবে: বিজিএমইএ 

  • অর্থনীতি
  • ০৫ জুন, ২০২১ ১৯:৪৯:৪৩

ছবিঃ সিএনআই

নিজস্ব প্রতিবেদক : 'বর্তমানে পোশাক শিল্পের ওপর যে আর্থিক চাপ আছে, সেটি বিবেচনা করে মজুরি বাবদ দেওয়া প্রণোদনা পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে আমাদের সুপারিশ বিবেচনাযোগ্য বলে আমরা মনে করি। শিল্প বাঁচলে ব্যাংকের ঋণ শোধ হবেই, সেইসঙ্গে কর্মসংস্থানও নিরাপদ হবে' বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।

 

শনিবার (৫ জুন) দুপুরে উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরের বিজিএমইএ কার্যালয়ে আয়োজিত বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি ফারুক হাসান, সিনিয়র সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজীম, সহ-সভাপতি এস এম মান্নান কচি, রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

এ সময় আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নগদ সহায়তার ওপর আরোপ করা ১০ শতাংশ কর পুনর্বিবেচনার দাবি জানান বিজিএমইএ এর সভাপতি ফারুক হাসান।

বিজিএমইএ'র সভাপতি ফারুক হাসান বলেন- 'করোনা সংকটের মধ্যে বেসরকারিখাতে সর্ববৃহৎ কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারি খাত পোশাক শিল্প বর্তমানে বিভিন্ন চাপের কারণে নাজুক অবস্থায় আছে। এ অবস্থায় শিল্পের প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে আনতে সরকারের অব্যাহত সহায়তার কোন বিকল্প নাই। আমরা বিশ্বাস করি, বিজিএমইএ এর পক্ষ থেকে বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, সেগুলো বাজেটে প্রতিফলিত হলে শিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়বে। সেইসাথে রপ্তানির উপর বর্তমান ০.৫০% উৎসে কর হার আগামী অন্তত পাঁচ বছরের জন্যই স্থিতিশীল রাখার অনুরোধ করছি। এটি করা হলে উদ্যোক্তরা আত্মবিশ্বাসের সাথে মধ্য মেয়াদি ব্যবসায়ীক ও বিনিয়োগ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারবেন।'

তিনি বলেন, এ মুহূর্তে আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ হল ক্যাশ-ফ্লো ম্যানেজ করা, যেটি করতে না পেরে অনেক কারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হচ্ছে। কর কিছুটা কমলে আমাদের ক্যাশ-ফ্লোতে কিছুটা স্বস্তি আসবে। কারখানা টিকলে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে নতুন গতি আসবে। আর পোশাক শিল্প ঘুরে দাঁড়ালে অর্থনীতির বৃহৎ পরিসরে পণ্য ও সেবার অন্য ব্যয় ও লেনদেন বাড়বে। হোটেল, পর্যটন, ব্যাংক, বিমা, প্রসাধনী ইত্যাদি খাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে, সরকারের আয় বাড়বে।

 

সংবাদ সম্মেলনে ফারুক হাসান বলেন, 'বাজেট কেবল পেশ করা হয়েছে। এখনো সরকার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলের সাথে আলাপ-আলোচনা করে অর্থনীতির প্রয়োজনে বাজেটে আরো কিছু পরিবর্তন করতে পারেন। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে আমাদের প্রস্তাবগুলো বিশেষভাবে পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানাচ্ছি। প্রথমত বাজেটে নগদ সহায়তার ওপর আরোপ করা ১০ শতাংশ কর প্রত্যাহারের অনুরোধটি পুনর্বিবেচনার আবেদন করছি। এ সংকটময় সময়ে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা হবে।'

 

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, করোনার ফলে বিশেষ করে নতুন বাজারগুলো অর্থনৈতিকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এ সমস্ত বাজারে রফতানি কমে আসছে। নতুন এবং অগ্রচলিত বাজারে রফতানি ধরে রাখতে প্রণোদনার হার ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করার জন্য আবেদন করছি, যা বর্তমান সময়ে আমাদের বাজার টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করবে।

তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী বেশ কয়েকটি খাতে কর সহজ করেছেন। করোনার ফলে আমাদের বিনিয়োগ, রফতানি ও কর্মসংস্থানে মন্দা বিরাজ করছে, অর্থাৎ গত দেড় বছরে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়নি বললেই চলে। এ অবস্থায় এ কর প্রত্যাহার করলে সরকার খুব বেশি রাজস্ব হারাবে না, কিন্তু শিল্প উপকৃত হবে।

তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক চাহিদার বিচারে আমরা অপেক্ষাকৃত কম বাজার দখলকারী কটনের মধ্যে সীমাবদ্ধ আছি। বিগত দশকে আমাদের দেশে নন-কটন, বিশেষত ম্যান-মেড-ফাইবার খাতে কিছু বিনিয়োগ হলেও প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছি না।

ফারুক হাসান বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলো ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রণোদনার আওতা ৫ মিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে ১০ মিলিয়ন ডলার করলে ব্যাপক সংখ্যক কারখানা বিপর্যয় এড়িয়ে ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে। রুগ্ন কারখানা ও প্রতিষ্ঠানসমূহের মূল ঋণ, সুদ ও মামলা খরচ বাবদ সমুদয় অর্থ অবসায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করলে সেগুলো পুনরায় ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে।

'যে শিল্পটি দেশের অর্থনীতির সামগ্রিক চিত্রটি বদলে দিয়েছে, বেসরকারি খাতে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে, সর্বোপরি বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশকে গৌরবের আসনে বসিয়েছে, সেই তৈরি পোশাক শিল্পের অগ্রযাত্রার পর্টি আরো মসৃণ খাড়া করতে সরকার আমাদের সুপারিশগুলো সহানুভুতির সাথে বিবেচনা করবে' বলেও আশাবাদী বিজিএমইএ। 

 

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo